বিসর্জন-শব্দ ধ্বনিই সার? প্রতিবার আশ্বিন আসে। সমস্ত দেহজবৃত্তির কাদামাটি চড়ে বাঁশ খড় মোড়ানো হাড়ের গায়ে। তারপরে কবে একদিন, সব ক্ষয়ে যায়। চোখ, মুখ, চুল, বুক, পেট, ঊরু, এমনিই পাঁচভূতে গিলে ফেলে তাড়াতাড়ি। পৃথিবী শরীর বেশিদিন চায় না। ধাঁচা চায়, তাই নিহত কঙ্কাল হয়ে কাঠামো ভাসে জলে, নইলে দালানকোঠায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরেকটা আশ্বিন খোঁজে। কোনোবার এহেন আশ্বিন আসবার অনেক অনেক আগে, চুল্লি অথবা চিতা গিলে নিয়েছে হাড়, মুখ, নাভি; সমস্ত সম্ভাব্য প্রবৃত্তির মাটি। ততদিনে গোটা সভ্যতা “অস্থি” বিসর্জন দিয়ে গঙ্গার ঘাটে পুণ্য কিনেছে, আর ভাগ বাঁটোয়ারা করে নিয়েছে ‘বিসর্জি’ দেবীর মুখাগ্নি করবার লোভ।
এই এই অগ্নি সংযোগে সবাই তৃপ্ত, সবাই তৃপ্ত ভস্ম বিসর্জনে। তাই অবশ্যম্ভাবী শোভাযাত্রা প্রয়োজন। কন্যার মুখাগ্নির পর এত সমারোহে অশৌচান্ত দরকার বৈকি। যে সভ্যতা সাড়ে পাঁচ হাজার বছর ধরে ঈশ্বরীর চিতা দেখতে ভালোবেসেছে, যে সভ্যতা প্রতিমার টুকরো টুকরো অঙ্গের তলদেশে পুণ্যস্নান সেরে নিতে গেছে, বিসর্জন উৎসব হতে বাধ্য বৈকি সে জাতের কাছে। তাতে যদি অজান্তে মাতৃনাশ হয়, হোক। মাতৃগমন হলেও কারোর কোনো ক্ষতি নেই। ধারিণী পৃথিবী পুনশ্চ স্তন পেতে দেবেন নিশ্চিন্তে জয়যাত্রা করার। আমরা আবার ঈশ্বরীর শবদেহ নিয়ে হেঁটে যাব। অথবা হাতজোড় করে কোনো সুদর্শন চক্র চেয়ে নেব, যাতে প্রেমিকের চোক্ষের নিমেষে সব অবলুপ্ত হয়ে গিয়ে পৃথিবীর প্রলয় ধ্বংস রক্ষা হয়। আমরা আবার দল বেঁধে দেহচ্যুত যোনিতে পূজা দিতে যাব। রক্তাক্ত ব্রহ্মপুত্রে আমাদের পুণ্যস্নান হবে। রক্তে ভাসুক মূর্তির মৃত্তিকা, পৃথিবীর লীলা তো তাতে শেষরক্ষা পায়!
বিসর্জন (তিলোত্তমা দিদির অন্ত্যেষ্টি মনে রেখে)
