আমি শ্রম করতে ভালোবাসি, শ্রমিক হতে চাই না। আমার কষ্ট হয়, কারও হুকুম শুনতে হয় ভেবে। জন্মগত আত্মীয়তা ছাড়া আর কোনো সম্পর্কের দায়িত্ব নিইনি কারণ আমি কারও হুকুম শুনবো না বলে। যে কোনো ভাবে এই জীবন, প্রেমিকা সমস্তকিছু ফুৎকারের উড়িয়ে হেঁটে যাবো রেললাইনে দুইদিকে পা দিয়ে। প্রতিটি দিন কি বিচ্ছিরি জঘন্যভাবে কেটে যায় একদিন ভালো হবে বলে। একদিন আর আসে না। অপচয়ের হারিয়ে যাওয়ার লম্বা লিস্ট দেখে আমি বিস্মিত হই গভীর লোর্ডশেডিং রাতে বারান্দায় বসে দেখি ভালোবাসা, সে নরেন্দ্র মোদীর থেকেও কি সাংঘাতিক ভয়ংকর।
আমি এখন কাউকে ভালোবাসি না, আমাদের সারমেয় আপুষকে কি তীব্র ভালোবাসতাম। আজ অনুভব করি, এতোটা মানুষকেও ভালোবাসিনি। লকডাউনের পরে পরে সারা শরীরে ঘা নিয়ে মন্দিরের দাওয়ায় সে মারা গেল। আমি জানলাম, কিছু করতে পারলাম না। মুখের উপর সমস্ত কিছু ছেড়ে দৌড়ে যেতে পারতাম। কিন্তু গেলাম না। তাঁর গায়ের ঘায়ের সমস্ত পোকা আমি পরিস্কার করতে অনায়াসে পারতাম এই ভাত খাওয়া হাতে।
আমি গভীর রাতে চিৎকার করে উঠি, কাকে বলি! এই প্রেম, এই ভালোবাসা। মানুষের থেকেও যার অনুভূতি প্রবল। আমি মানুষ বলেই বুঝি তাঁকে ঠকিয়েছি। সে তো মানুষের মত এত কৃপণ নয়। সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড়ে আসতো। গায়ের উপর লাফ দিয়ে উঠতো। এই বেঁচে থাকার কোনো চার্ম নেই, মানুষের ভাষায় সেক্স নেই। আমি তো শ্রমিক হবো না, আমি পাগল আর দিশেহারা হবো। চরিত্রের এই মাখন আর বাবু বিলাসি ভালো লাগে না। আমার মৃত্যু নিয়েও চিন্তা নেই। যেমন তেমন হোক। পূর্ব পুরুষদের মরে যেতে দেখলাম, কী হবে এই শৌখিন মজদুরির। ভালোবাসায় পূর্ণ হোক। এখন আর বাড়ি যেতে ভালো লাগে না। কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই। কেউ তো অপেক্ষা করে না। মনেও রাখে না। যারা রাখে, সে সব শৌখিন কথায় আমি চুপ থাকতে পারি। বিশ্বাস করি না। আমি তো এতোটা কাউকে ভালোবাসি না, আপুষের মত। যে গভীর রাতে, ভোর হবার আগে আমায় ছাড়তে আসতো স্টেশনে কেমন ভয়ংকর বিপদ নিয়ে। এই ভালোবাসা তো আমি কোথাও পাইনি। মানুষের মত চতুর লোক দেখানো শৌখিন তো আমার সারমেয় নয়। আমি তাঁকে ভালোবেসেছিলাম। মানুষের মিথ্যা আশ্রয়ে কথার ছলনে আমিও বিশ্বাস করেছিলাম। হয়তো এখনো আমাকে মানুষকে ভালোবাসতে হবে, আপুষতো নেই।
বিবেকানন্দের চোখের জল মিথ্যা নয় জানি, এত বড় হৃদয় বিস্ময়ে মানুষের প্রতি তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কোনো মোহ নেই। তবুও কেন জানি না এই সকল হুকুম শুনতে হচ্ছে।
মানিক সেনের হিজিবিজি গদ্য
