‘বেইমান’ বইটি সম্পর্কে দুই-একটা কথা

কবি অমিতাভ সেনের এইবছর ২০২৫ এর মে মাসে প্রকাশিত নতুন সাড়ে চার ফর্মার পূর্ণাঙ্গ কবিতার বই ‘বেইমান’ এই সময়ে যা উল্লেখযোগ্য কাব্যগাথা। মলাট রক্তাক্ত, কবি ও কাব্যগ্রন্থের নাম কালো হরফে দেওয়াল লিখনের মত এক ইস্তেহার। বেইমান। কে বেইমান?

উৎসর্গ করেছেন, তিলোত্তমার প্রতি। বিভাবের পাতায় লিখেছেন, যা বইয়ের ভেতর ঢোকার আগেই আমাদের মন প্রাণ শরীর আর এই বাস্তবিক জীবন বলে ওঠে –

“যে শহর আজও ২২শে
শ্রাবণে কাঁদে নিয়ম
করে”

এই শহর হল কলকাতা। এই কলকাতা আর কয়েক বছরের মধ্যে ঘটে যাওয়া নির্ভয়ার মৃত্যু নিয়েই কবি তাঁর নিজের নিপুণ ছন্দে অক্ষরে প্রতিবাদ করেছেন, রাষ্ট্রিক দুরাচারের বিরুদ্ধে।

যখন মানুষ পথের ক্লান্তিতে আরজিকরের নৃশংস ঘটনায় প্রতিবাদ করছেন রাজপথে, ঠিক সেই সময় কবি লিখছেন-

“ভাষা কী ভীষণ ধাতু
অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে জোগায়,
মাত্রা মেপে বিভেদ বাড়ায়।”

বাহান্নটি কবিতা দিয়ে সাজানো এই কাব্যগ্রন্থ। প্রতিটি কবিতা ছন্দে শব্দে এক নূতন মাত্রা এনেছে।

‘বেইমান’ নামক কবিতায় কবি লিখেছেন,

“বিপ্লবের উন্মত্ত আগুনে
রাজা দেখতে চেয়েছিল
বিপ্লবীর মুখ,
যে মুখ ছিল অচেনা —
প্রতিটি ক্রীতদাস সৈন্য একে-একে বলে উঠেছিল,আমি স্পাটাকাস,”

অথবা আর একটি কবিতায় কবির বক্তব্য স্পষ্ট

“ফুটপাতে ওর
কামাই ছিল না বিয়োনোর,
লোভহীন ও…
ছিল যে লোভনীয় বড়ো!”

কবি অমিতাভ সেনের লেখায় কোনো ভনিতা নেই। সরাসরি যা বলবার বলছেন। ছন্দে অক্ষর তাঁর নিজস্বতা হারিয়ে যায়নি। এই বইয়ের শুরুতে কবি লম্বা ভূমিকা লিখেছেন। তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

“কোনো কবোষ্ণ বসন্তমধ্যাহ্নে ‘বেইমান’-এর উন্মেষলগ্নে আমার প্রধান সংশয়ের বিষয় ছিল কোন প্রবণতার পক্ষে বা বিপক্ষে চালিত হবে আমার ভাষা। বইটির প্রথম কবিতা ‘ভাষা’ বলা যেতে পারে ‘বেইমান’-এর প্রচ্ছদভাবনা বহন করেছে। বিপদের সংকেত এড়িয়ে কবিতা নির্মাণ ছিল প্রায় অসম্ভব। ক্রমশ চারুকাব্যের নিপুণ গঠনে ঘটল অনিবার্য সংঘাত। ‘স্যাঁতসেঁতে তলপেটও’ (‘সুখ’) ভাষা পেল। ‘সুন্দরের সাধনা অপরাধ’ (‘অপরাধ’) মানতে বাধ্য হলাম ভেসে উঠে ‘অপরিণতির পাড়ে’ (‘অপরাধ’)। ভাষার প্রশ্রয়ে ‘বেইমান’ পরিণতির দিকে পথ হাঁটল। বিষয়ের বিভিন্নতা লক্ষ করলে ধরা পড়বে সমসময়ের ক্রমবর্ধমান প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বৃত্তায়নের কার্যক্রম। অবধারিত নিয়মে পুরাণ-পর্যটনে ব্রতী হয়ে কখনও পৌঁছোলাম ‘এক রোমান রাজার কাছে’ (‘বেইমান’), কখনও বা ‘সিন্দবাদের নাবিক’ (‘অতীতযাপন’) চোখ খুলে দিল বর্তমানের ‘সাম্যহীন দ্বৈরথে’, তবে পারতপক্ষে হইনি ‘লীন শূন্য ছন্দাগারে’ (‘কবি’)।”

কবি অমিতাভ সেনের এটি অষ্টম গ্রন্থ। শেষ কবিতাটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ। কবিতাটির নাম ‘আয়না’।

“আবার কেন বিরোধ
গ্রহনক্ষত্রে লড়াই লাগাতার?
আয়না বড়ো আপদ
শত্রুমিত্রমুখ দ্যাখে নির্বিকার।”

বেইমান
অমিতাভ সেন
প্রচ্ছদ : অমিতাভ সেন
প্রকাশনা : ধানসিড়ি
দাম : ২০০/-

ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply