শাশ্বত বসুর গল্প

অনুষ্টুপী মধুযাপন আর নিষাদ ফাঁদের কথা

“Sundarban is the most beautiful place in Bengal but Sundarban is the most dangerous place in Bengal too”, লাইনটা কোনো এক বইয়ে পড়েছিল ডরোথি, কলেজে পড়ার সময়। ‘ডরোথি বিশ্বাস’, পাথরপ্রতিমার মেয়ে। সেই ছোট থেকে জল,জঙ্গল,জীব-জন্তু জগতের সাথে মনুষ্যসমাজের ঘোলাটে ক্ষীণ সহাবস্থান দেখে বড় হয়েছে। ২০১৬ তে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট সার্ভিস’ এ যোগ দেওয়া। এখন চিকুরী ফরেস্ট অফিসে পোস্টিং, ফরেস্ট রেঞ্জার হিসেবে। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের ভুটভুটি বোটটা খুব নীচু হয়ে, দুপাশে মাতলা নদীর কালচে জলে অলৌকিক সৌন্দর্য্যের মাদুর বুনছে। ডরোথি চোখের উপর লং রেঞ্জ বাইনোকুলারটা চাপিয়ে দেখে নেয় চারিপাশ। দুদিকের উঁচু জায়গাগুলোতে কাঁকড়া, গরান, গেওয়া, হেঁতাল গাছের জঙ্গল। সেখান থেকে জমি ঢালু হয়ে নেমে এসেছে নদীর পাড় অবধি। এখন অমাবস্যার মরা কোটাল চলছে, তাই দুপাশের চড় নোনা জলে ডুবে গেছে। নাহলে অন্য সময় জায়গাগুলো থকথকে পা ডোবানো কাদায় ভরে যায়। জোয়ারের জল সরে গেলে কাঁকড়া গাছের শ্বাসমূলগুলো তীক্ষ্ণ হয়ে জেগে ওঠে শক্ত ভোঁতা ছুরির আগার মত। অ্যালট নম্বর ১২০, ১২১, গৌরচক গ্রাম। এখানেই আজ ভোররাতে এক্সিডেন্ট কেসটা হয়েছে। ‘ঝাঁসি মন্ডল’ নামের এক গ্রাম্য গৃহবধূকে বাঘে তুলে নিয়ে গেছে আজমলমারীর জঙ্গলে। সেই কেসেই স্পট ভিসিটে যাচ্ছে ডরোথি, সাথে দুজন ফরেস্ট গার্ড। এঁদের মধ্যে একজন ‘অরূপ মন্ডল’, খুবই অভিজ্ঞ। বহুবছর হয়ে গেলো এই জঙ্গলে। এদিককার জঙ্গলে গাছের পাতা, খাল জোলার গতিপথ, বাঘের মুভমেন্ট খুব ভালোভাবে চেনে ও। মাস চারেক আগে গত ফেব্রুয়ারিতে শ দুয়েক চেতলা হরিণ ছাড়া হয়েছিল এদিককার জঙ্গলে, বাঘের খাবার অভাব মেটাতে। কিন্তু এদিকটায় এখন পোচিংএর খবর খুব পাওয়া যায়। বোটে করে এসে পোচাররা জঙ্গলে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থেকে বন্দুক ছুড়ে হরিণ মারে। সেইজন্যই লোকালয়ে বাঘ হানা দিচ্ছে খুব। হঠাৎ বর্ষা এসে যাওয়ায় বাঁধের গায়ের লাইলন ফেন্সিংয়ের কাজ পুরোটা শেষ করা যায়নি, সেইখান থেকেই বনমামা দের আবির্ভাব হচ্ছে। পশ্চিম দিক থেকে জলীয় বাষ্পের একটা ঘূর্ণি এসে সজোরে ধাক্কা দিল বোটটার গায়ে। ভুরভুর করে ভেসে আসা জোলো বাতাস সামনের ডেকে দাঁড়িয়ে থাকা ডরোথির সারা গায়ে সোঁদা গন্ধের আলেখ্য এঁকে দিল যেন। ডেকের অন্য পাশটাতে ডান হাতে ট্রাংকুইলাইজারটাকে ধরে বিশেষ কায়দায় বাঁ হাতে বিড়ি ধরিয়েছে অরূপ। বিশেষ কায়দায় কারণ মুখটা তাঁর বাঁ দিকে বেঁকে গেছে। একবার জঙ্গলে প্যাডিংয়ের কাজ করতে গিয়ে ওর ওপর টাইগার অ্যাটাক হয়েছিল। বাঘের থাবায় মুখ আর মাথা চুরমাচুর হয়ে যায় অরূপের। প্রায় মাসখানেকের যমে মানুষে টানাটানির পর, বন বিবির দয়ায় ঘরে ফেরে অরূপ। এখনো সেই গল্প শুনলে গায়ে কাঁটা দেয় ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের নতুনদের। তবু অরূপ হার মানেনি। চাকরি ছেড়ে বাড়িতে বসে সরকারী পেনশনে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবার বদলে, জঙ্গলে ফিরে এসেছে। আসলে এই বিবস্ত্র জঙ্গল আর তার মধ্যবর্তী বিচিত্র জীবজগৎই এখনও ওর জীবন আসক্তির মূল কারণ। এই সুন্দরবন আসলে কাদের? দক্ষিণরায়, হিংস্র শ্বাপদ, শঙ্খচূড়, কালাচ, রাজগোখরার মত বিষধর সরীসৃপ, সদা ক্ষুধার্ত কুম্ভীরকুল, চিতল হরিণ, রংবেরঙের পাখি যেমন মৌটুসী, পাপিয়া কিংবা মদন টাক, বক, লাজুক সুন্দরী হাঁস এদের? নাকি জঙ্গলের একদম গা ঘেঁষে মূর্তিমান মরীচিকার মত বসবাস করা নিঃসঙ্গ, নিশ্চুপ, নির্ভার, ছায়াচ্ছন্ন জনপদগুলোর? এ প্রশ্ন চিরন্তন স্বাভাবিক। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ‘ডিস্ট্রিক্ট হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ এর সমীক্ষা অনুযায়ী সুন্দরবনের মোট ১০২টি বদ্বীপের মধ্যে ৫৪ টিতে জনবসতি আছে বাকি ৪৮ টিতে আছে সংরক্ষিত অরণ্য। তবু অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ, এ জঙ্গল মা বনবিবি আর দক্ষিণরায়ের। দক্ষিণরায় এ জঙ্গলের অঘোষিত নরখাদক রাজা, তার সাথে তুমুল যুদ্ধ-বিবাদ বনবিবির। বনবিবির উপাখ্যানে পাওয়া যায়,
“আঠারো ভাটির মাঝে আমি সবার মা
মা বলি ডাকিলে কার বিপদ থাকেনা
বিপদে পড়ি যেবা মা বলি ডাকিবে
কভু তারে হিংসা না করিবে”

 

 

আসলে জঙ্গলের রাজার সাথে জলের শাসক কুমীরের বিবাদী আখ্যান, লোকশ্রুতি হয়ে ভেসে বেড়ায় লোকসাহিত্যের শর্বরী অন্তঃসলীলায়। আজও জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া শিকারে যাওয়া কিংবা মধু সংগ্রহে যাওয়া প্রতিটি জেলে কিংবা মৌলি বিশ্বাস করে, বনে যাবার আগে মা বনবিবির পূজা দিলে বিপন্ন সময়ে মা তাদের নিজের সন্তানের মত আগলান।
বর্ষার মেঘের সাথে ফন্দী করে অস্বাভাবিক রকমের একটা আলো-আঁধারির মায়া জাল, বিকট ফ্যাটফ্যাটে ফণা তুলে আকাশটাকে প্রায় পুরোটা ঢেকে ফেলেছে। মাকি নদীর মুখটায় এসে ফরেস্ট বোট টা ডান দিকে বাঁক নিল। আর কিছুদূর এগোলেই খালের আগাটা সরু হয়ে ‘পান্তামারি খাল’ শুরু। এই ধরণের খাল বা জোলাগুলোতে মাছ কাঁকড়ার পরিমাণ থাকে অনেক বেশী। খয়রা মাছের টোপ দিয়ে এখানে জেলেরা বড়শিতে কানমাগুর, সোনাবোগো কিংবা কাঁকড়া শিকার করে। অথবা ভাঁটার জলে হাতজালে শিকার করে চাকা চিংড়ির ঝাঁক। দুধারে নিদ্রিত ঘন হেঁতাল পাতার জঙ্গল। হেঁতালপাতার হলুদ সবুজ রঙের অস্পষ্ট আবছায়ায় গা মিশিয়ে, অশরীরী ধূমকেতুর মত ওঁৎ পেতে বসে থাকে বাঘ। জঙ্গল ভিতর দিকে খুব ঘন, সূর্য্যের আলো মাটি ছোঁয় না। শিকার করার সময় বাঘ বিড়ালের মত দুপায়ের মাঝে শরীরটা ভাঁজ করে ছোট হয়ে যায়, তারপর হাড় হিম করা একটা ক্ষমাহীন হুংকার ছুঁড়ে, চারপায়ে প্রচন্ড লাফ দেয়। মানুষের টুঁটি কামড়ে ধরে, তীক্ষ্ণ দুটো শ্বাদন্ত দিয়ে গলার নলি ফুটো করে দেয়। সাথে বাঘের দুই পাটির carnassial teeth কাজ করে কাঁচির মত। ঠিক এরকম একটা ঘটনা ডরোথি শুনেছিল জঙ্গলে মধু শিকারে যাওয়া এক মৌলি ছেলের মুখে। তার চোখের সামনে দিয়ে বাঘ তার বাবাকে নিয়ে গেছিল নৌকা থেকে। ঘটনাটা বলতে বলতে তখনও কেঁপে কেঁপে উঠছিল সে, “আমরা দীর্ঘ্যদিন ধরি জঙ্গলি যেতাম। বাবা তো পেরায় পনেরো ষোলো বছর বয়স থেকি জঙ্গলি যায়। আমার যখন আঠারো বচ্ছর বয়স, তখন থেকি আমুও জঙ্গল শুরু কইরলাম। বাবার সাথে জঙ্গলে যায়া কাঁকড়া ধরতাম, মধু কাইটতাম। মরিচঝাঁপির জঙ্গলি যায়া মাছ কাঁকড়া ধইরতাম, বাইরের জঙ্গলিও যেতাম। একদিন মরিচঝাঁপির জঙ্গলে তখন দুপুর হয়ই গ্যাসে। আমাদের বাড়ির ওপারে সোজা খালটা। খালের ভিতর যায়া দুটো ডাল দুদিকে গ্যাসে। দক্ষিণের ডালে ঢুকি গেলাম আমরা। যে খালটায় ঢুকিসি পুব্বো দিকে আগা, পশ্চিমে গোড়া। আমাদের নৌকাটা আনুমানিক চোদ্দ হাত, পনেরো হাত লম্বা হবে। খাল থিক্ক্যা একখান সরু খাল বেরোই চিলমারী কুমিরমারী জঙ্গুলে যায়া জয়েন্ট হইসে। খালের একদম আগায় খুব সরু জায়গায় নৌকা রাখি দিসি। তক্ষনি বর্ষা আসলো, ভালো জোরে বর্ষা আসলো, দশ পনেরো মিনিট বর্ষা হবার পর আস্তে আস্তে বর্ষা একটু কমে আসলো। কমে আসার পর ওরা দুজন নেমে গেলো, বাবা আর পতিবেশী কাকা। দক্ষিণ পারে নেমে ওরা শ দুই ফুট ভেতরে গ্যাসে। আমি নৌকায় বসি রইলাম। এইবার নৌকায় যখন একা বসে আসি, তখন চিন্তা করসি কি করি! জঙ্গলের তো পরিস্থিতি ভালো না! বাঘের চাপ খুব! আমি তাড়াতাড়ি করি নৌকো বেঁধে, ওদের পেসন পেসন গেলাম, জোরে গেলাম। যাওয়ায় ওরা বললো কেন তুই নৌকা ছেড়ে আসিছিস? আমি বুললাম জঙ্গলের পরিস্থিতি খারাপ আমি থাকি তোমাদের সাথে। এবার কাছাকাছি চারখানা কাঠগড়ান গাছে চাক দেখিসি। চাকে মধুও হইসে খুব। এক একটা চাকে পেরায় তিরিশ কিলো মধু হবি। বাবা বুইল্লো চাক কাটা হবে ধুঁয়ো করা দরকার। হেঁতাল পাতার বোলেন হবে, চলো কুমীরমারির দিকে যাই। বর্ষায় হেঁতাল পাতা সব ভিজি গ্যাসে, শুকনা পাতা চাই। কাকা বলতিসে কুমিরমারী যাব না, যে খাল দিয়ে ঢুকিসি চলো ওখানে যাই। ওখানে হেঁতাল পাতা আসে। হেঁতালি গাছের গোড়া খাল থিকে প্রায় ৩০০ ফুট, যেখানে আমরা নৌকা রাখিসি সেখান থেকে। ওই মন্তব্য কইরে নৌকায় আসলাম। দুইজন দুই মাথায় বসি আসে, আমি মাঝায়। নৌকো খালে এমনি ভাসতেছে। খালের মুখ সমান জোয়ার উঠিসে তখন। আমরা গেছিলাম দক্ষিণপাড়ে, বাঘটা ছিল উত্তরপাড়ে। উত্তরপাড়ের জঙ্গলটা ঘন, ছাড়া ছাড়া, উঁচু। ছোট হেঁতালি গাছের পিছনে একটা গাড্ডায় বাঘটা ছিল। জোয়ারের টানে ভাসতি ভাসতি নৌকোর পাসাটা বাঘের মুখের কাছে। বাবা দুবার দাঁড় টেনে নৌকাটা স্টেইট করিসে, দ্বিতীয়বার বোটে তুলে মারতি যাবে অমনি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ঝ্যাঁট ঝ্যাঁট করি একটা বিশাল আওয়াজ হলো। আওয়াজ শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমরা তিনজন ঐদিকে ফলো কইরে ঘার ঘুরিয়ে হাঙ মারিসি। হাঙ বেরোচ্ছে মুখের দিয়ে, বাঘটাও স্পিডে বেরিয়ে আসতেসে, বাবার লেবেলে ভাসনা টাইপি। ওই অবস্থায় বাবার ওপর পরি দুই হাতো বাবার দুই সাইড দিয়ে ঢুকায়ে দিসে। বাবায় বাঁধি নিয়ে নৌকোর অপোজিট ছাইডে জলের তলায় ঢুকি গেল।“ আসা যাওয়ার সাঁকো ধরে ঝুলতে থাকা মানুষের মত বিপন্নতা নিয়ে ওর দেখা দক্ষিণরায়ের চণ্ডাল মূর্তি বোঝাতে ছেলেটাও বাঘের মত দুহাত সামনে প্রশস্ত করে দেখিয়েছিল। সে হাত তখন কাঁপছে।
“বাবার কোন এধার ওধার হবার কোনও টাইমই দিইনি, যে উঠে দাঁড়াবে বা শুয়ে পরবে বা সাইড করবে। মানে এতো স্পিডে বাঘ বেরোইসে, তড়িঘড়ির মধ্যি, যে কোনও টাইম দিইনি। বাবায় নিয়ে ঐভাবে জলের তলায় ঢুকি গেল। জলের তলায় যখন ঢুকি গ্যাসে আমি তখন নৌকোর মাঝায়। আমার হাতে ফুট তিনেক বেশ একটা মোটা লাঠি ছ্যাল। খালের রুইতে তখন জল আসে, এই আমার বুক সমান জল আসে। হাতে লাঠিটা নিয়ে আমি নৌকার সোজা আসি, আপিয়ার হয়ে আসি, যদি বাঘ বাবায় লইয়া ভাসি ওঠে আমি বাঘের মাথায় বাড়ি দিব। বেশ কিছুক্ষন পর বাঘটা জলে ভীষণ পাক তুলিসে, কিন্তু বাবাও উঠ্তন না বাঘও উঠ্তন না। কিছুক্ষন পর বাঘ পিঠ ভাসি দেল, আমি মুখে ভীষণ আওয়াজ করি বাঘের পিঠে বাড়ি দিসি। বাবার মুণ্ডটা গিলে নিসিল, বাঘ ছারিকে পলাইল।”
ডরোথিদের বোটটা খাল বরাবর ভেসে এসে একটা ছোট্ট ঘাটে ভিড়ল। সামনে মাছের ভেড়ি, তার গা দিয়ে বাঁধটা। বাঁধটার গা ঘেঁষে ঘন জঙ্গল। প্রায়ই মাতলা নদীর ওপারের রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে বাঘ সাঁতরে নদী পেরিয়ে এসে এই জঙ্গলটায় গা ঢাকা দেয়। সন্ধ্যে হলে এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেওয়া হলে, বাঘ বেরিয়ে আসে লোকালয়ে। এর ওর গোয়াল থেকে গরু ছাগল তুলে নিয়ে যায়। সুযোগ পেলে মানুষও শিকার করে। এদিককার বাঘেরা প্রায় প্রত্যেকে ম্যান ইটার। বাঁধের গা বরাবর কিছুদূর এগিয়ে গেলে বনবিবির মন্দির। কোস্টাল মুইপীঠ থানার অন্তর্গত এই গ্রাম এখন প্রায় জনমানবশূন্য। মন্দিরেও পুজো হয় না। জনবসতি থাকলে অবশ্য বৈশাখ মাসের শেষ মঙ্গলবার পুজো হবার কথা। এই পুজোতে জঙ্গলের বিভিন্ন উপকরণ লাগে, যেমন হেঁতাল গাছের পাতা, কাঁকড়া গাছের পাতা। পাশেই একটা বাণী গাছ, গায়ে শুকনো মালা, মানতের লাল সুতো জড়ানো। জোয়ারের সময় বাঁধের ওপাশের জঙ্গলটার গাছগুলোর গা বেয়ে প্রায় ১০-১২ ফুট অবধি জল উঠে যায়। জল নামলে বোঝা যায় বাঁধের ওপাশটা কতটা গভীর। বোটটা ছেড়ে দিয়ে ডরোথি বললো সামনের খাঁড়ি বেয়ে মাতলা নদীতে ওদের জন্য অপেক্ষা করতে। ছোট ছোট ঝোঁপের জঙ্গল পায়ে মাড়িয়ে কিছুদূর ইঁটের রাস্তা বরাবর এগোতেই সামনে একটা কুঁড়েঘর দেখলো ডরোথি। গায়ে বাঁশের খাঁচা, মাথায় হোগলা পাতার ছাউনি। সম্ভবত ভেড়ি থেকে তুলে মাছ কাঁকড়াগুলো শুকনো হত এখানটায়। বাঘের উপদ্রব বাড়তে এই ঘরটাকেও খালি করে চলে গেছে মানুষজন। মৃত্যুর বিষাদ এতটাই অনিশ্চিত করে তুলেছে এখানকার জীবন যাত্রাকে। কুঁড়ে ঘরটাকে ফেলে রেখে কয়েক হাত এগোতেই রাস্তার উপরেই পড়লো বাড়িটা। উঠোনের সামনেই একজন কোলকুঁজো বৃদ্ধ, দাওয়ায় দুটি ছোট ছেলেমেয়ে বসে মুড়ি চিবোচ্ছে তখনও। নিতান্ত অবোধ শিশু। আজ ওদের মা কেই বাঘে তুলে নিয়ে গেছে। কথা বলে যা বোঝা গেলো, বাড়ির পিছনে কয়েক হাত দূরে বাথরুম। পথটা ছোট ছোট গেওয়া গরান আর অগোছালো ঝোঁপে ঢেকে গেছে। ভোররাতের দিকে বাথরুম যাবার প্রয়োজন হয়েছিল স্ত্রীলোকটির। বাঘ আগে থেকেই পাশের ঝোঁপ ঝাড়ে ঘাপটি মেরে ছিল। এই পথ দিয়ে যাবার সময় শিকারের ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পরে। শিশুগুলি তখন নিশ্চিন্ত ঘুমের দেশে। এই বৃদ্ধ ধ্বস্তাধ্বস্তির আওয়াজ পেয়ে অন্ধকারে কিছুদূর এগিয়েও কিছু ভালো করে ঠাহর করতে পারেননি। শুধু তার ছেলের বৌয়ের প্রাণফাটা আর্তনাদ আর বাঘের হাড় হিম করা গর্জন কানে এসেছে তাঁর। সরকারি ক্ষতিপূরণের জন্য মেয়েটির নামধাম, বয়স ইত্যাদি তথ্যগুলো নোট করতে করতে শিশুগুলোর দিকে বার বার চোখ চলে যাচ্ছিল ডরোথির। ঘরে ওরও ছোট দুটো ছেলেমেয়ে আছে। তারা এদেরই বয়সী হবে। কথায় কথায় বৃদ্ধের কাছ থেকে ডরোথি জানতে পারলো কয়েক মাস আগে জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে এই বৃদ্ধের ছেলেও বাঘের পেটে গেছে। হাতের খাতাটা বন্ধ করে চোয়াল শক্ত করে ডরোথি। জঙ্গলের ভেতর কিছুটা গেলে যদি বডিটা পাওয়া যায়, যদি বাঘটাকে ট্রেস করা যায়, অন্তত এই বর্ষার ভিজে মাটিতে pugmark থাকবেই। বাঘটাকে ট্রাঙ্কুলাইজ করে ফরেস্ট গার্ডদের অন্য টিমটাকে খবর দিতে হবে। বাঘটাকে ঘুম পাড়ানো গেলে গলায় রেডিও কলার পরিয়ে, খাঁচায় ভরে বড় নদীর উল্টো পাড়ের রিজার্ভ ফরেস্টে ছেড়ে দেওয়া যাবে। এই কাজটা ছাড়া প্যাডিং ও অন্যান্য কাজের জন্য অবশ্য আলাদা টিম আছে। তবু ডরোথির মত ফরেস্ট রেঞ্জার আর তাঁর বাহিনীই এই জঙ্গলের অভিভাবক। বন্যপ্রাণের অবস্থান সুরক্ষিত করা আর স্থানীয় জীবনকে জঙ্গলের বিপদের হাত থেকে দূরে রাখার জন্যই এই অঞ্চলের অধিবাসীদের সহযোগীতায় তৈরী হয়েছে, ‘Joint Forest Management Committee’ বা JFMC। বাঘটাকে খুঁজে বার করার একটা অবিরাম জেদ যেন পেয়ে বসলো ডরোথিকে। বৃদ্ধের কথা ঠিক হলে জঙ্গলের পথ ধরে মাতলা নদীর দিকে এগিয়েছে বাঘটা। পথে নরম মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া গেলে অবশ্য আরো নিশ্চিত হওয়া যায়। রাইফেলম্যান ‘অখিল পান’ কে ডেকে ডরোথি বললো, “অখিলবাবু আপনে রাইফেল নিয়া চলেন আমার পেছুন পেছুন। ঐদিকডায় পোচারের ঝামেলা আসে। কিন্তু বাঘ দেখলি আমার অর্ডার না মেলা অবধি কেউ মুভমেন্ট কইরবেন না। বুঝতি পারতিসেন?” অখিল নিজে আগে পোচার ছিল। মাতলা নদীর চড়ে চিতলা হরিণের ঝাঁক পাওয়া যায়। ওরাই সুন্দরবনের বাঘের প্রধান খাদ্য। পোচাররা গাছে চড়ে তক্কে তক্কে থাকে। বাঘ চড়ার দিকে এলেই গুলি চালায়। তাছাড়া খাড়ি, জোলার জলে বিষ দিয়ে মাছ শিকার তো আছেই। মাটির বাড়িটার পিছন দিকে বর্ষার জলে গজিয়ে ওঠা ঝোঁপঝাড়গুলো হাতের কুঠার দিয়ে সাফা করতে করতে, পথ বানিয়ে এগিয়ে চলেছে অরূপ মন্ডল। বাঁ হাতে বেকিয়ে ট্রাঙ্কুইলাইজারটা ধরেছে। অখিল অবশ্য জঙ্গলে ঢুকতে বারণ করেছিল। ঠিক বারোটা বাজে এখন। দুপুর বারোটায় নাকি জঙ্গলে ঢুকতে নেই, এসময় জঙ্গলে বনবিবি নামাজ পড়েন। সবই জঙ্গলের লোকশ্রুতি হয়তো, কিন্তু ধর্ম-আচার-সম্প্রদায় এগুলো সবই উল্টে পাল্টে মিশে আছে কথাগুলোয়। জঙ্গলের পথটাকে প্রায় ঢেকে রেখেছে চিতে,বকরা ঝাঁপি, কাঠগড়ানের ঘন ত্রিযামা চাদর। জোয়ারের জল এলে গাছগুলোর গায়ে এসে জমা হয় নোনা কাঁকড়া বা নোনা ঝিনুক। ভীষণ ধারালো, অসাবধান হলেই গায়ের চামড়া চিরে রক্ত বেরিয়ে আসবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাতে থ্রি নট থ্রি রাইফেলটাকে নিয়ে পিছু পিছু আসছে অখিল পান। সে ততক্ষণে হেঁতাল পাতার খেঁজুরের একটা গোছা ছিঁড়ে হাতে নিয়েছে। বিচিগুলো টিপে ফেলে দিয়ে ফলগুলো খেতে শুরু করেছে। সামনেই একটা খোলসে গাছে ছোট ছোট মৌমাছি ভোঁ ভোঁ করছে। এই ফুলের মধু খুব মিষ্টি হয় তাই ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের থেকে এই গাছগুলোতে এই আকারের ছোট মৌমাছিগুলো দিয়ে মধুর চাষ করানো হয়। বর্ষার এই সময়টায় জঙ্গল থেকে বেরিয়ে জংলী শুয়োর হানা দেয় লোকালয়ে। তাদের পেছন পেছন বাঘও এসে হাজির হয়। আরো কিছুটা এগোতে একটা ছোট পুকুর মত পরলো। একটা খাড়ি অর্ধেক বুজে গিয়ে এই ব্যবচ্ছেদের রূপ নিয়েছে। এইখানে প্রচুর মাছ কাঁকড়া পাওয়া যায়। প্রকৃতির অকৃত্রিম নৈসর্গিক রূপান্তরে জঙ্গলটা এখানে যেন মৃত্যুকালীন খিদে আর অমার্জিত দর্শনশৈলীর এক সন্ধিহীন যাপনচিত্রের উদযাপনে রত। পুকুরটার পাড় বরাবর উত্তরদিকে এগোতে প্রথম বাঘের pugmark চোখে পরলো অরূপের। ভিজে কাদায় একজোড়া ছাপ। pug মার্ক অনেকটাই আয়তাকার এবং PML (Pugmark Length) এবং PMB (Pugmark Breadth) এর তফাৎ প্রায় ২.৫ সেন্টিমিটার। তার মানে এটি বাঘ নয় পূর্ণবয়স্ক বাঘিনী। একটু দূরে পর পর আরো দুজোড়া বাঘের পায়ের ছাপ, আকারে একটু ছোট। এরা ব্যাঘ্র শাবক। তাঁর মানে মা শিকার করে এনে বাচ্চাদের খাইয়েছে, তারপর সবাই মিলে এই পথ ধরেই নদীর দিকে গেছে। Pugmark বলছে শাবকেরা খুব ছোট নয়, এদের বয়স আন্দাজ দেড় বছরের কাছাকাছি। সতর্ক হয়ে ওঠে ওরা তিনজনে, আশেপাশেই বাঘ থাকতে পারে। ডরোথি মোবাইল ক্যামেরায় বাঘের পায়ের ছবি তুলে রাখে। পাশের একটা মরা কাঠ গরানের ডালে বসে একটা মদন টাক সমানে মাথা নাড়ছে আর মুখ দিয়ে অদ্ভুত আওয়াজ করছে। Leptoptilos javanicus, হাড় গিলগিলে চেহারা। মাথাটা অবিকল টেকো বুড়োদের মত। বিশালাকার চঞ্চু দিয়ে এরা মূলতঃ মাছ শিকার করে। দূরের আকাশটার ভেজা গায়ে পরিপাটি কনে বৌয়ের লজ্জা রাঙা লালের টুকরো ছুঁড়ে দিয়ে, কমলা রঙের রোদ টাকে এঁটো করে উড়ে গেলো একটা সিঁদুরে মৌটুসী। জলাটায় চড়ে বেড়াচ্ছে বেশ কিছু সুন্দরী হাঁস। এরা মানুষের সাহচর্য একদম পছন্দ করে না। এই ধরণের গভীর জঙ্গলেই মৌচাকের লোভে ছাটা করে নিরন্ন, দারিদ্র্যের যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাওয়া কিছু মানুষ। একবার জঙ্গলে গেলে হয়তো হপ্তা দুয়েকের অন্ন সংস্থান হয় ওদের। কোটালের জল নামতে শুরু করেছে। জায়গাটা জুড়ে এখন ফুটে উঠছে সার দেওয়া কাঁকড়া গাছের শ্বাসমূল। এগুলোর উপর দিয়েই মুখে করে শিকার নিয়ে দৌড় দেয় বাঘ, ঘাড়টা মুখে নিয়ে পাছার দেয়। এ যেন এক অশ্রাব্য বধ্যভূমি। যেন এক বিশ্রী অভিশাপ। একটা স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ মাখানো জায়গাটায় মানুষের গোঙানি, বাঘের খুনে প্রবৃত্তি, আর চরম যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু সবে মিলে চারপাশ কালো করা একটা বিবর্ণ মনস্তাপ এসে ভিড় করে ডরোথির মাথার পেরিটাল লোবে। হঠাৎই হাত পাঁচেক দূরত্ত্বে পরে থাকা কিছু একটা ঘিরে মাছির ভ্যানভ্যানানি শুনতে পায় ওরা। যেন বুভুক্ষুর এই রাজ্যে মাছিদের পিকনিক চলছে। হাতে সুন্দরী গাছের একটা মরা ডাল নিয়ে এগিয়ে এসে অরূপ মন্ডল আবিষ্কার করে ওটা একজন মেয়েমানুষের ডান হাতের কাটা কব্জির কিছুটা অংশ। তার মানে বডিটা ছ্যাছড়াতে ছ্যাছড়াতে এতদূর নিয়ে এসেছে বাঘটা। আশেপাশের জমি জুড়ে বেশ কিছু বাঘের পায়ের ছাপ আর বাসি রক্তের দাগ। আজ যাঁর সন্ধানে এই গভীর অরণ্যে ওদের আসা, এই ছাপগুলো সেই বাঘিনী আর তাঁর শাবকদেরই। হঠাৎই আশেপাশের মাটি কাঁপিয়ে একটা বিকট আয়াজ হলো, “ওয়াউউউম”, পরপর বেশ কয়েকবার। আর কিছুদূর এগোলেই মাতলা নদীর চর। ঐখানেই হেঁতালের বন থেকে আসছে আওয়াজটা। গাছের ডাল জুড়ে বাঁদরের লাফালাফি, পাখিদের চিল চিৎকার বুঝিয়ে দেয় খুব কাছাকাছির মধ্যেই তাঁরা আছেন। অরূপ তার প্রায় অকেজো হয়ে যাওয়া বাঁ হাত থেকে ট্রাঙ্কুইলাইজারটা ডান হাতে নিয়ে শক্ত করে ধরলো এবার। খুব সাবধানে প্রায় নিঃশব্দে ওরা নদীর দিকে এগোয়। জঙ্গলের ভেতর ঘুরতে ঘুরতে কখন ঘন্টা চারেক পেরিয়ে গেছে, খেয়ালই নেই কারও। ঘন সবুজের আড়ালে দিনের আলোটা প্রায় পরে এসেছে। হুটপাট করে সন্ধ্যে নেমে যাবে হয়তো। ডরোথি সার্চ লাইটটা বার করে জ্বালালো। পাশেই চিলমারী খাল, বনবিবি খাল। স্থানীয় মানুষের কাছে এসব জায়গা সাক্ষাৎ নরক। হঠাৎই সামনের ঝোঁপে সার্চলাইটের তীব্র আলোয় এক জোড়া জ্বলন্ত চোখ দেখতে পেল ডরোথি। হাতের ট্রাংকুইলাইজারটায় বিরামহীন ক্ষীপ্রতায় ঘুমের ইনজেকশন লোড করলো অরূপ। হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে ছায়াসদৃশ সাড়ে ছ ফুটের দেহটাকে আন্দাজ করে নিয়ে নিশানা সাধল বাঘিনীর ঘাড়ের দিকে। আরো দুজোড়া জ্বলজ্বলে চোখ দশহাতের ভেতর ঘোরাফেরা করছে তখন। অরূপের বন্দুক থেকে Xylazine আর Ketamine মেশানো ইনজেকশন ফায়ার হলো। জন্তুগুলো বিশাল লাফ দিয়ে উল্টোদিকে হেঁতাল পাতার আড়ালে মিলিয়ে গেল। ডরোথি ওয়াকি টকিতে ম্যাসেজ পাঠালো, “টাইগার দেখা গেছে মাতলা নদীর উত্তরদিকের খালে। ব্যাকআপ ফোর্স পাঠান। ওভার।” হঠাৎই বিকট গুলির আওয়াজে চারপাশ কেঁপে উঠলো, বুকফাটা বিকট আওয়াজ, পরপর দুবার। আবার পাখিদের কিচিমিচি, নদীর চড়ে হরিনের পালে উৎকণ্ঠা, চঞ্চলতা। ওরা তিনজন দৌড়োল চড়ার দিকে। পোচার!! এবার অখিল আর ডরোথি হেঁতাল ঝোঁপের আড়ালে বসে চোখ রাখে বাইনোকুলারে। চড়ের বাঁ দিকের সুন্দরী গাছের ডালে দুজন পোচার, মুখ চোখ গামছায় ঢাকা। ডরোথী সেই দিকে তাক করে সার্ভিস রিভলভার বার করলো। অখিলও ওর থ্রি নট থ্রি তে নিশানা করেছে গাছের ডালে। ডরোথি চাপা গলায় বলে ওঠে, “আমি ইশারা করলে ফায়ার কইরবেন।” ডরোথি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মা আর ওর বছর দেড়েকের ছানাগুলো তখনও পোচারদের নিশানার ভেতর। বাঘিনী চড়ের ডান দিকে একটা খাদের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে, বাচ্চাগুলোকে আড়াল করে। ডরোথির রিভলভার গর্জে উঠলো।

আজ সকালে বাঘিনী নিজের সন্তানদের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য আরেক ‘মা’ কে তুলে নিয়ে এসেছে। নিজের শাবকদের মুখে তুলে দিয়েছে নরমাংস। দুটি অসহায় মানবশিশু হয়তো আরো বেশ কিছুদিন তাদের মায়ের পথ চেয়ে থাকবে। তারপর ঠিকই একদিন ওরা সত্যিটা বুঝবে। বুঝতে শিখবে জঙ্গলের ক্ষুধার খাদ্যশৃঙ্খল বিঘ্নিত হলে, নিৰীহ মানুষের প্রাণ যায়। এর জন্য দায়ী হয়তো মানুষেরই চাহিদা, লোভ। ডরোথি ওদের মানুষ মা কে হয়তো আর ঘরে ফেরাতে পারবে না। কিন্তু বাঘিনী আর তাঁর শাবকদের জঙ্গলে যদি ফেরাতে পারে, তবে ঝাঁসি মন্ডলের মত আরো অনেকগুলো জীবনের অকালে খরচ হয়ে যাওয়াটা আটকাতে পারবে। এই যে বিপুল মৃত্যুযজ্ঞের আয়োজন যার সাথে মিশে আছে অপরিমিত আতঙ্ক, প্রতিদিনের জনজীবনে যা চিরবিচ্ছেদের অশনি হয়ে বাজে, এর পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারলেই হয়তো এই সুন্দরবন, যা ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ এর তকমা পেয়েছিল একসময়, ম্যানগ্রোভ কাঁটার রক্তাল্পতা নিয়ে যা আজও আয়লা, রেমাল এর মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সভ্যতাকে আগলায় বুকে করে, তার জীবন আরো কিছুটা দীর্ঘ্যায়িত হবে। এই সুন্দরবনকে প্রতিনিয়ত সমানুপাতী ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে এই বাঘেরাই। যত্নশীল দীক্ষায় ডরোথি আর তার ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট, কালনিদ্রার অন্তঃপাতী প্রহর জাগে প্রায় নিভে আসা বাস্তুতন্ত্রের মূর্তিমান প্রহরী হয়ে।

ছবি – লেখক

ভালো লাগলে শেয়ার করুন
Avatar photo

By শাশ্বত বোস

জন্ম ১৯৮৯ সালের জানুয়ারী মাসে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার শ্রীরামপুর শহরে । হুগলী জেলারই রিষড়া শহরে শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম বিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে ২০০৫ ও ২০০৭ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন । ছোটবেলা থেকেই তিনি লেখালেখির সাথে যুক্ত। বিভিন্ন নামী পত্রিকা যেমন সন্দেশ, জোয়ার, কোরক, পথ ও পাঁচালি ইত্যাদি পরিবারের তিনি নিয়মিত সদস্য ছিলেন ।

Leave a Reply