জরাসন্ধ
আমাদের সময়ে সন্ধি নেই, সন্ধি থাকে না। সাতবাসি দেবতার ঘর করে পচে গেছে সতেরো যুগের হাত পা। অন্তরাল, অন্ধকূপ সবাই সরে যাচ্ছে একে একে। চোখ ধাঁধানো আলোয়, রোদ্দুরে ঝলসে যাচ্ছে কিশোরীর পোকায় কাটা যোনি। তুমি দূর থেকে সুগন্ধ খুঁজে নাও মনে মনে। অথবা দেখো পালবালিশে চৈতন্যের ঘুণপোকা। তোমার ব্যাহত ঘুমে ক্ষয় করেই চলেছে, করেই চলেছে, অনাহূত দিনে। ধরো সেই ঘুমের দেহ কখনো ক্ষয়েই গেল পুরো। তুমি কোনো সন্ধ্যার বুকে নেমে এলে বিগত চৈতন্য খেয়ে ফেলে। তারপর হঠাৎ দেখছ রাত্রি। ভয়াবহ রাত্রি। আর সেই রাত্রির চাতালে শুয়ে নিঃশ্বাস ফেলছে কোনো তরুণীর বিদগ্ধ চুল। কয়েকটা শতাব্দী মাঝে গলে যায়। তুমি দেখে যাও তার বীভৎস চুলের ফণা, আর ভুলে যেতে থাক তার অজস্র গোপনাঙ্গের কথা। তুমি অন্ধকারে তার মুখ দেখতেও ভয় পাও। দেখে যাও দীর্ঘ চুলের দীর্ঘশ্বাস। অথবা ভেবে নিতে থাক কোথাও ফিরেছে তোমার পুরোনো অন্ধকূপ, অথবা বধ্যভূমি প্রাজ্ঞতর কোনো, যেখানে তুমি ভালো থেকে যেতে। ভালো থেকে যেতে বড়ো ভয়াবহভাবে। ক্রমাগত তুমি ঢুকে যেতে চাও ফেলে আসা কারাকক্ষের পেটে।নিটোল কণ্ঠস্বরে দেওয়ালে ভেসে ওঠে ঐ নগ্ন নারীর গ্ৰাফিতি। তুমি দেখে চলো তার চুলে গুহ্যতর শোক; শ্বাস নিচ্ছে তোমার বুকে, পিঠে, ঘামে, অথবা নৈসর্গিক কোনো আফসোস চিঁড়ে ফেলে। ওপাশে ঝাপ্টা দিচ্ছে বাসবিদ্ধ বসন্তকাল, তোমাকে ঘিরেছে তারা, মর্তের সব জংধরা ভাঁজে ঘিরেছে। কিছুক্ষণেই তুমি তার শব্দ শুনবে। অথবা রক্তস্রোতে ফুটে উঠবে গ্ৰাফিতির নগ্নিকা দেহ। আর তোমার দেহে অজস্র সুতোর গন্ধ, হত্যা করতে চাইছে এ গর্ভের সমস্ত বিপ্লব কথা।
ধরে নাও তখন সামনে এলেন তন্বী। গর্ভে ভিক্ষা চাইলেন মজ্জার শিশু। তুমি অনাহূত মুখে তাকে দেখে গেলে। নগ্ন স্বচ্ছল জানু গায়ে মেখে তন্বী চলে গেলেন অগাধ শূণ্যের ধারে। পুনশ্চ তোমার কারাকক্ষে অন্ধকার, হয়তো বা তার আসন্ন চুলেরই। এই অন্ধকার তোমার জন্য থেকে যায়, ধারালো কোনো রাত্রিবাসের কথা ভেবে।
ধীরে ধীরে চিরায়ত অন্ধকূপ চুঁয়ে পড়ে। নগ্নিকার দেহে জমা বিন্দু বিন্দু ঘামের মতো করে। তার নাভির গর্ত তোমাকে ডাকে। দুভাগে শরীর অগ্নিছিন্ন করে দেবে বলে। অন্ধকার, গভীর চুল, কুহক, কারাকক্ষ, নাভিশ্বাস, সবাই ডেকে চলে বলে,
“কাছে এসো জরাসন্ধ। এখনো অজস্র ঊরুধ্বনি শোনা বাকি আছে।”
ছবি – sadamasa motonaga