আমার গলা অবধি রুদ্ধশ্বাস। আমার ব্রহ্মতালুতে জ্বর। এখানে কেউ নেই। এখানে কেউ থাকে না। আমার বুক অবধি ঝলসানো আগুন। মাথার চুলে জড়ানো অঙ্গার। আমাকে দেখতে পাচ্ছ তথাগত? এখানে অবশেষে এসেছি। বড়ো অসহায় হয়ে এসেছি। আমার মুক্তির লোভ নেই। ক্ষয়ের অহং নেই। আমি এইপাশে সর্বস্বান্ত ভিক্ষুণী। তোমার ছিন্ন নদীর জলে জুড়িয়ে নিতে ইচ্ছা হচ্ছে আকাশ পাতাল। দেখছ কত অঙ্গার দেহে ছেয়ে আছে? দেখছ হাড়ের মধ্যে কতখানি জটিল ঘুণ? তোমার কি অধিকার নেই, এ শরীরে নেমে আসবার, মর্তের পালকে ভর করে? আমাদের মূর্চ্ছনা শেষ, শেষ সমস্ত নিরুত্তাপ। অবশেষে একলা এই দ্বীপে রয়ে গেছে ভঙ্গুর কিছু তাপ উত্তাপ কথা। জানি, শুকনো তোমার ও কমন্ডলু, শুকনো তোমার ও কণ্ঠতল। তাও দেখতে পাচ্ছি, তোমার অস্থির সারবাঁধা গলি হেঁটে যাচ্ছে পাশের বিশ্ব দিয়ে। কোনো গোলার্ধ গতকাল সেখানে খুন হয়েছিল। আর বলেছিল তুমি এসেছিলে। ঐ ধার দিয়ে এসে দেখে গিয়েছিলে সবকিছু।
গোলার্ধ দহনের সেই রাত কোনো ভয়াবহ ভিখুণী ছিল গতজন্মে। এইবার মনে পড়ে। তুমি খুঁজতে এসেছিলে তাকে। বলেছিলে তার বধ্যভূমি প্রস্তুত হবে যেকোনো দিন। এই গভীর দ্বীপপুঞ্জের সকলকে তাকে ছেড়ে দিতে হবে। ভিখুণী শুনে নেয়। একলা রাত্রে গুনতে থাকে চুঁয়ে পড়া আকাশের তারা। আসলে আকাশে তারা নেই। মাটিতে ধুলোবালি নেই। সব তার দেহে সৎকার পেয়ে গেছে। আর ক্রমশ নিজেই সে হয়ে গেছে এই ভয়াবহ রাত, কিংবা সে রাতের বড়ো ব্যক্তিগত যূপকাষ্ঠ। ভিক্ষুণী ছিঁড়ে যেতে পারে এ দেহের থেকেও, কিংবা পুড়ে যেতে পারে আরো কোনো গোলার্ধের সাথে,খুব তাড়াতাড়ি। তাই ঐ দূরে দেখো। যে শ্মশানভূমি আমাকে পুড়িয়ে মারছে রোজ, সেখানে তুমি ও পুড়ছ, তোমার একলা ব্রহ্মাণ্ড পুড়ছে। তার চেয়ে চলো, আমরা ক্রমশই ঝরে পড়ে যাই। অথবা ঝরেই পড়ি এই বসন্তের রাতে।
ছবি – লেখক