হিজিবিজি গদ্য

প্রতীকী ছবি

খুব ছোটবেলায় যখন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেতাম, প্রায় শুনতাম নির্মল মাইতির ভাষণ। আমার খুব ভালো লাগত। সচরাচর কেউ বক্তৃতা দিলে দর্শকাশনে বসে থাকা অতিথি গল্পে মশগুল থাকত। নির্মল বাবুর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। খুব শান্ত হয়ে শুনতেন। স্কুল মাস্টারমশাই ছিলেন। সারাজীবন খালি পায়ে থাকতেন। শিক্ষা সংস্কৃতি নিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন সমগ্র জীবনে। রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার পেয়েছিলেন।

যেমন ভাবে সুচরিতা দাশের মেদিনীপুরের শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ভোরের আলোর মত তার অবদান। সেই যে আপন খেয়ালে বড়ো হয়েছি, নিজের মত। আজ যে ভাবনা আমার মনে, তা তো কেউ পোষণ করেনি। নিজে নিজেই এই পথে এসেছি। তর্ক করতে ভালোবাসি। শুধু এই ভাবনা মাথায় রাখতে হয়, যেকোনো সময় যেকোনো কেউ ব্যাক্তি আক্রমণ করতে পারে। হয়তো যাতা বলে, ম্যানহোলের দৃশ্য দেখতে পাই। ভুরভুর করে গন্ধ বেরোয়। এই সহ্য আমাদের শিখিয়েছে সেইসব পুরাতন মানুষ। যারা আমার জীবনে ছায়া ফেলেছে। আমি তো আমার মতামত দেব। অন্যের মত মন দিয়ে শুনবো। এই শিক্ষায় বড়ো হয়েছি।
তাই হয়তো কোনো মানুষের ভেতরে ঢুকতে ইচ্ছে করে না, যদি আস্ত ম্যানহোল দেখতে পেয়ে যাই। আবার কারও প্রতি করুণা জাগাতে ইচ্ছে করে না। তবু কেন জানি মানুষ দেখতে ভালোবাসি। তাদের লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছে হয়। কুড়মালি ভাষার জন্য যে লড়াই চলছে, আমি তো ভীষণ ভাবে সমর্থন করি। আমরা দিনরাত রাষ্ট্রের বিরোধিতা করি, আমরা কি মানুষের পাশে থাকতে পারি না। শুভ বুদ্ধির পাশে থাকতে ইচ্ছে করে না? রাজনৈতিক আদর্শ আমাদের চোখে ঠুলি পরিয়ে রেখে দিয়েছে। রাষ্ট্র যে কম সেয়ানা, তা বলছি না।
একজন মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, পরিশ্রম করে অর্জিত সম্পদে যে তৃপ্তি অর্জন করে তা তো আর অন্য কিছুতে নেই।
আমার এক বন্ধু, কলেজ পাশ করে বাড়িতে বসে আছে। স্বচ্ছল পরিবার। সারাদিন আর. ডি বর্মনের গান শোনে। তখন প্রতিদিন ধানমাঠের ধারে বসে রাত্রি আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত আমরা আড্ডা দিতাম। একদিন আমায় বলল, একটা কাজ দেখে দে… বাড়িতে বসে থাকতে ভালো লাগছে না। আমি বললাম, কাজ করতে পারবি? মানসিক শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হবে। তার আগে ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ পড়ে নে। বলল, বাড়িতে বসে বসে হাত মুঠো করতে পারছি না। চল বাংলা খেয়ে আসি। প্রশ্রয়ে আশ্রয়ে চলে গেলাম, বাংলা মালের দোকানে। দেখি কত কত মানুষ বসেছে। একই ভাবে স্বর্গ আর নরক দর্শন আমার হচ্ছে। বন্ধু আমার খাচ্ছে। আমি পারছি না। অসহায়ের মত বললাম, আমি না পারবো না। খেতে হবেই। শুনছে না কোনো কথা। মাছ ভাজা দিয়ে খেলাম। নিজেকে পুরুষ পুরুষ মনে হল। বন্ধুরা তো ভাবে, আমি এত নরম কেন? গরম নয় কেন? সেদিন প্রথম নিজেকে পুরুষ মনে হল। সাইকেল নিয়ে কীভাবে যে ফিরে এসেছিলাম বাড়ি জানি না। বন্ধু বলেছিল, হিসি পেলে… একটু দূরে করিস… গন্ধ পেয়ে যাবে। এত নেশা এত ঘোর লেগেছিল দেহমনে, মাঝরাতে ঘর থেকে বেড়িয়ে শিব মন্দিরে গিয়ে শুয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, মাকালি পেটের উপর পা তুলে দাঁড়িয়েছে।

পরদিন ঘুম থেকে উঠে পঞ্চাশ পাতা পড়লাম, ‘সেই সময়’। তখন দুটো খন্ড। নবীনকুমার কেশব বাবুর ঘরে প্রায় যাচ্ছেন। তখন প্রতিদিন যা খুশি না লিখলে বা কোনো বই না পড়লে, তুচ্ছ মনে হয়। পাড়ায়, চায়ের দোকানে, ট্রেনে, বাসে, সিপিএমকে দেখলেই খিল্লি শুরু হয়ে গেছে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একাই খেলছেন। বাপি কাকার সাদা খাতায় দুই লাইন লেখা,

একটি কাক দিচ্ছে ডাক,
সন্ত্রাসবাদ নিপাত যাক

ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply