প্রতীকী ছবি

উনিশ শতকের বিষয় ক্লাস করতে গিয়ে কিংবা সেই ক্লাসের প্রয়োজনেই হুতোম প্যাঁচার নকশা পড়তে গিয়ে মাস্টার মশাইয়ের কাছ থেকে এটুকু জানতে পারি যে হুতোম এবং উৎপল দত্তের টিনের তলোয়ার নাটকটি আলাদা সময়ের কালে লেখা হলোও তা একই সময়কালের কথা বলে।  প্রসঙ্গত মাস্টারমশাই আমাদের পড়াতে গিয়ে শঙ্খ ঘোষের ‘বাবুমশাই’ কবিতাটির কথা বলেন বা একসাথে হুতোম বা বাবুমশাই এর নিবিড় পাঠের কথা বলেন এই নিবিড় পাঠ প্রসঙ্গে কেন আসছি তা খানিক পরে বলছি কিন্ত…কিছু জরুরী কথা।  বলা প্রয়োজন বলে মনে হয় এই জরুরী কথাগুলো এই রকম মর্মে আমি সাজালাম।

ক।   আমার এই লেখা সুমন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় টিনের তলোয়ারের কিছু দৃশ্য নির্মাণ এবং সেই দৃশ্যগুলোর প্রতিগ্রহণ বা প্রতিফলন এই বিষয়ে কথা বলে

খ।   এই লেখাটি লেখার মুহূর্ত অব্দি আমার উৎপল দত্তের মূল নাটকটি পড়া ছিল না নাটকটি আমি যেখানে বসে লিখছি। তার আশেপাশেই রাখা রয়েছে তবুও আমি পড়ছি না কারণ আমি চাই না এই লেখা সুমন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালিত নাটক এবং উৎপল দত্তের মূল নাটক দুটি নাটকটি আমি আলাদা text হিসেবে ধরতে চাই।  এবং সেটাই আমার লক্ষ্য।  আবার আসি মূল প্রসঙ্গে।  নাটকের দৃশ্য নির্মাণের জায়গা।  যা আমার ভালো লাগে আমাকে নাড়িয়ে দেয় বা কিছু ক্ষেত্রে আমার আপত্তির ও কারণ ঘটায়।  নাটকটি শুরু হয়, মদ্যপানরত কাপ্তেন বাবু এবং একজন মানুষের কথোপকথনকে কেন্দ্র রেখে এবার বলে রাখা জরুরী যে এ দৃশ্যটিতে আলোর ব্যবহার।  স্পষ্ট করে যে এটি রাত্রি বেলার দৃশ্য এবং রাত্রি কথাটি এখানে জরুরী যারা আমাদের মাস্টারমশাই সেই ক্লাসগুলো করেছিল তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে তিনি হুতোম পড়াতে গিয়ে বারবার ফিরেছিলেন রাত্রি জীবনানন্দের রাত্রি কবিতাটির কাছে।

“হাইড্র্যান্ট খুলে দিয়ে কূষ্ঠরোগী চেটে নেয় জল;
অথবা সে-হাইড্র্যান্ট হয়তো না গিয়েছিলো ফেঁসে।
এখন দুপুর রাত নগরীতে দল বেঁধে নামে।
একটি মোটরকার গাড়লের মতো গেল কেশে

অস্থির পেট্রল ঝেঁড়ে; সতত সতর্ক থেকে তবু
কেউ যেন ভয়াবহভাবে প’ড়ে গেছে জলে।
তিনটি রিক্‌শ ছুটে মিশে গেল শেষ গ্যাসল্যাম্পে
মায়াবীর মতো জাদুবলে।

মদির আলোর তাপ চুমো খায় গালে।
কেরোসিন কাঠ, গালা, গুনচট, চামড়ার ঘ্রাণ
ডাইনামোর গুঞ্জনের সাথে মিশে গিয়ে
ধনুকের ছিলা রাখে টান।”

আমার নিজস্ব পাঠ এই কবিতাটি এবং হুতোম এবং শঙ্খ ঘোষের ‘বাবুমশায়ের’ নিজস্ব পাঠ একটা বিকল্প কলকাতার কথা বলে।  কলকাতা শব্দটি লেখার সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্জালে ছবি আজ ভেসে আসে যেমন ভিক্টোরি মেমোরিয়াল, জাদুঘরে সাদা থামওয়ালা বাড়ি এবং সেগুলির খন্ড চিত্র সাথে জয় পরাজয়ের দীর্ঘশ্বাসের সাথে এই সাদা থাম্বালাম বাড়িগুলোর সংলাপ কখনোই মেলেনা বরং সেই বাড়িগুলো আশেপাশের বস্তি বাসী দাদাদের প্রদেশ স্বরলিপি গ্রহণ করে না মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি দৃশ্য নির্মাণ যদি রাত্রেবেলার দৃশ্য এবং বাবুমশাই কবিতাটি আরেকটি কলকাতার অঞ্চলে যুক্ত একজন সেই এলাকার প্রতিনিধি কাপতন বাবুর সাথে কথা বলে সেই ব্যক্তিটি যিনি এমন ভাবে মঞ্চ বানানো যে তার নিজ থেকে বেরিয়ে আসেন উঠে দাঁড়ান দাড়ান।  ঢুকে যান এবং বেরিয়ে আসেন এবং সেখান থেকে কথা বলেন এবং তার সামগ্রিক নির্মাণ পোশাক বেশভূষা এবং গায়ের রংয়ের টেক্সচার আমাদের বা আমাকে অনেক কিছুর কথাই মনে করায়।  কখনো সেই ব্যক্তি হয়ে ওঠেন সেই মানুষটির প্রতিভূ যিনি দলিত হওয়ার জন্যই তাকে ম্যানহোলে ঢুকে পরিষ্কার করতে হয় কখনো তিনি জেলে শ্রমিক কুলি মজুর শুধু আফ্রিকার কোন মানুষ যার গায়ের রং গারো কালো মানুষটি তার নিজের ভঙ্গিমায় বারে বারে ক্যাপ্টেন বাবুকে স্মরণ করান।  যে তার ময়ূরবাহন সে কখনো টাকা দিলেও দেখবে না তা সে দেখবে না কোনোভাবেই এবং সে নাটকটি বুঝতে পর্যন্ত চায় না সে।  দ্বিধান্বিত হন, সব্বাই এবং তা আরো গুলিয়ে দেয় ময়না নামের একটি মেয়ের প্রবেশ।  এবং আমার নিজস্ব প্রতিবেদন বা প্রতিগ্রহণ বা প্রতিফলন এই থাকবে যে কলকাতা নামক যক্ষপুরীতে ধানি শাড়ি পড়া নন্দিনী সেই মেয়েটি হলো ময়না।  নাটকটিতে ময়নার পোশাক খুব সম্ভবত তিনবার বদল ঘটে,  একবার শ্রমিক শ্রেনীর মানুষের মতো পোশাক যা ধানি রং দ্বিতীয়বার দামি পোশাক কিন্তু তাও ধানের রঙের এবং শেষে তার পোশাক গাঢ় লাল এবং পোশাকের কথায় কেন আসছি সেটা আমি পরে বিস্তৃত লিখব আপাতত সেই ময়না মেয়েটি গান শুরু করে।

“ছেড়ে কলকাতা হবো পগার পার”

এখানে কলকাতা হয়তো সেই সাদা ধামওয়ালা বাড়ি উচ্চ বিত্তমানুষ বা সেই তাদের নানা কব্জার কথা এবং এইখান থেকে বি সারপে গান গেয়ে ময়না পাড়ি দেয় ক্যাপ্টেন বাবুর বাড়ি।  পরের দিন এবং সেখানে গিয়ে কাপ্তেন বাবু আদেশ করেন যাতে ময়না কে সাবান দিয়ে ঘষে ফর্সা করে দেওয়া হয়।  তার নাম হয়ে যায় শংকরী প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো কিন্তু তার নাম দুর্গা বা গৌরী হয় না তার নাম হয় শঙ্করী,  শিবের স্ত্রী।  যেহেতু আমি একজন মেয়ে এবং সেই আঙ্গিক থেকে এই লেখা লেখা ঘষে মেজে পরিষ্কার করা এবং নাম বদল আমার মনে দুটো জিনিস মনে আনে প্রথম ময়না আর Tempest এর ক্যালিবান কোথাও গিয়ে এক হয়ে যায় আমার কাছে।  ঘষে যে পরিষ্কার করা করা মহিলাটিকে… একজন subaltern মহিলাকে… Caliban to Propero : “you taught me language”

দ্বিতীয়ত নাম বদলে আমার পরিচিত বৃত্তে যদিও এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয় কিন্তু তবুও কখনো ব্যক্তিগত সামাজিক পারফরম্যান্স দিয়ে রাজনৈতিক হয়ে ওঠে এবং সে কারণেই এটা বলা আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতায় এটা দেখা যে মা স্ত্রী এর এক নাম হলে ধরা যাক পূর্ণিমা হলে ব্যবহারের কারণে বা সঙ্গত কারণে যদিও যেটা কতটা সঙ্গত আমার সন্দেহ আছে স্ত্রী এর নাম বদলে যায়,  পূর্ণিমা হয়ে যায় বাসন্তী… কম্প্রোমাইজড হয় সেই নতুন বাড়িতে নতুন মেয়েটির মাতৃপিতৃ প্রদত্ত নামটি যা তার সত্তায় অস্থিমজ্জায় মিশে আছে ময়না থেকে শঙ্করীর এই রদ বদলে এই দুটো জিনিস লক্ষণীয় অন্তত আমার reading e.
এরপর যেটা বলবো তা হল নাটকের দুর্গাপূজা ঢাকের আওয়াজ এবং তাতে ময়না নিজস্ব লয় নাচ পরের দৃশ্যগুলোর জন্য জরুরী সে নাচটিতে কোথাও গিয়ে আমি ময়না সাবালটন ছন্দ এবং সেই আদিম ছন্দকে খুঁজে পাই তার মুভমেন্ট এখানে ফ্রি সে নিজের মতো করে নেচে যাচ্ছে একা একা।  ওই মুহূর্তটুকু জন্য কেউ নেই এবং আমার কানে বেজে ওঠে।

“কত রঙ্গ শিখেছো গো মা।  মুন্ড মালিনী”

গানটি গানটির ছন্দ… মোট কোথাও গিয়ে প্রলয় নৃত্য হয়ে উঠে এটি।  অন্তত আমার চোখে।  এবং কয়েকটি দৃশ্য পড়ে প্রথমার্ধ শেষ হয় সে সবার আগে যে দৃশ্যটি আসে তাই কি পারফরমেন্সের মধ্য দিয়ে উচ্চতার সহকারী শীর্ষে শংকরী ঠিক যেমন দুর্গা প্রতিমার হাইট গণেশ কার্তিক লক্ষী সরস্বতী থেকে উঁচু হয় সেই রকম এই নির্মাণ দেখতে দেখতে মনে পড়ে যায়, মেঘে ঢাকা তারায় জয় মা তে গানের সঙ্গে বট গাছের নিচ দিয়ে নীতা প্রবেশ এইরকম একটি মুহূর্তে প্রথমার্ধ শেষ হয় পরের দৃশ্য গুলোর যে অল্প কিছু দৃশ্য নির্মাণের কথা আমি এই লেখা দ্বিতীয় কিস্তিতে লিখবো।  ধন্যবাদ..

ভালো লাগলে শেয়ার করুন
Avatar photo

By রাজসী বসু কুন্ডু

অক্ষর আর আকাশ কুসুম স্বপ্ন বুনেই লিখতে ভালোবাসে। প্রকাশিত বই- মীরার গান, বিষণ্ণতার ছবি।

Leave a Reply