একটি বাজে গল্প

সরষের তেলটা কিভাবে মাপা যায়, বলতে বলতে অনিমেষ বেরিয়ে গেল। আজ মোট সাতাশ জন কে চাল ডাল তেল আলু পিঁয়াজ এবং একটি করে সাবান দেওয়া হবে। প্রায় প্রতিদিন অনিমেষ ও তাঁর বন্ধুরা মিলে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আজ অনেকদিন হল লক ডাউন চলছে। মানুষের কাজ বন্ধ। তাঁরা খাবে কি? এই চিন্তায় তাঁরা যতটা পারে মানুষের কাজ করছে। হয়তো যতটুকু দেওয়া হচ্ছে দুই- তিন দিন চলবে। কিন্তু কি করবে, তাঁদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে।
দুপুরে অনিমেষ বাড়ি ফিরে, সমস্ত জামাকাপড় ধুয়ে, চান সেরে নিয়ে ঘরে ঢোকে। ডাক্তার বাবুরা বলেছে, এই করোনা ভাইরাস জামাকাপড়ের মধ্যে আসতে পারে। হাতে পায়ে জুতোর মধ্যে থাকতে পারে। তাই সমস্তটা ক্ষার দিয়ে ধুয়ে নেয়। অনিমেষ অতটা বোকা নয়। দুপুরের খাওয়া হলে একটু গড়িয়ে নেয়। এই লক ডাউনে যেন বেশি বেশি খিদে পায়। কি আর করবে, পেটকে তো আর না বলতে পারে না।
বিকালে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে, চায়ে চুমুক দেয়। আজ সকালটা অনেক ধকল গেল। কালকেও বেশকিছু পরিবারকে চাল ডাল আলু তুলে দিতে হবে। অনেক খরচ। কয়েকজন মানুষ এগিয়ে এসেছে। তাঁরা সাধ্যের মধ্যে টাকা পাঠাচ্ছে। চা খাওয়া হলে অনিমেষ ছাদে যায়। আবহাওয়া ভালো নয় বৃষ্টি নামতে পারে। আকাশের দিকে তাকায়, সূর্য ডোবাটা অতটা পরিস্কার নয়। নিচ থেকে ভাইপো ডাকে, কাকাই তোর ফোন বাজছে…
হুড়মুড় করে নেমে অনিমেষ ফোনটা তুলে দেখে, অপরিচিত নম্বর।
— হ্যালো
— কেমন আছিস ( মহিলা কন্ঠ )
— ভালো আছি কিন্তু আপনি কে বলছেন…
— আমায় চিনতে পারলি না। আমি সায়নী। এবার বুঝতে পারছিস?
–অনেকক্ষণ থেমে, ও আমাদের অয়ন। ( কলেজে সকলে সায়নী কে অয়ন বলতো )

এখানে বলে রাখা দরকার সায়নী হল অনিমেষের কলেজ বেলার বন্ধু। সায়নী অয়নকে ভালোবাসতো। তাই সায়নী কে অয়ন বলে ক্ষেপাতো সকলে। সে গতজন্মের কথা। অনিমেষের সমস্ত কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে। কি সুন্দর জীবন ছিল। এখন সকলে যে যার পথে চলে গেছে।

— আচ্ছা সায়নী, আমার ফোন নম্বর কথা থেকে পেলি? একসময় তোদের কত খোঁজ করেছি…
— সে অনেক মজার ঘটনা। এখন লকডাউনে বসে বসে বোর হচ্ছিলাম। ভাবলাম একবার ফোন করি।
— ভালো করেছিস। কি করছিস? কেমন আছিস? অয়নের খবর কি?
— অয়নের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত আমার আর ঘর করা হল নারে। এখন একটা স্কুলে চাকরি পেয়েছি।

এইভাবে অনেক কথা হয়। সায়নী আর অনিমেষের। আলো কমে আসে । কথা বলতে বলতে আবার অনিমেষ ছাদে উঠে আসে। আকাশের দিকে তাকায়। মেঘ পরিস্কার হয়ে গেছে। আকাশে কত তারা। জ্বল জ্বল করছে অনিমেষের নিজস্ব সন্ধ্যাতারা।

— কি রে, চুপ করে আছিস কেন? সায়নি জিজ্ঞেস করে।
— তারা দেখছি…
কিছুক্ষণ কথা থেমে থাকে।
— চারিদিকে মানুষ যখন খেতে পাচ্ছে না। তুই তারা দেখছিস। আমার রাত্রে ঘুম আসে না। যাঁরা দিন আনে দিন খায় তাদের কি অবস্থা, কেমন আছে, কে জানে?
— সায়নী, অয়ন তোর পেছনে কেমন লাগতো ! তোর মনে আছে? সেই সব বিকালে রতন দা’র চায়ের দোকানে কত আড্ডা।
— তুই এইসব ভাব, আমি ভাবছি গরিব মানুষের কথা। সেই সব মানুষের কথা ভাবতে ভাবতে কত কবিতা লিখে ফেললাম।
— আচ্ছা তোর মনে আছে, ‘সপ্তপদী’ নন্দনে দেখানো হবে মহানায়কের জন্মদিনে। আমরা পরীক্ষা না দিয়ে নন্দনে চলে গেলাম।
— এইসব ফালতু কথা ছাড়। দেশের মানুষের কি অবস্থা.. তাছাড়া তুই এখনও আগের মতো রয়ে গেলি। তোর আর কি চিন্তা। বাবু ছেলে।
— আচ্ছা তুই পাঁচশো টাকা আমাকে দে, আমি কিছু চাল ডাল মানুষ কে দিই বা তোর পাড়াতেও তুই দিতে পারিস।
— নারে, আমার দেওয়ার মতো কোনো পয়সা নেই।
— তাহলে, তুই চাল আলু দে?
— আমি পারবো না। আমি খুব বেশি মাইনা পাইনা। তুই যখন বলছিস ভে….

নেটওয়ার্কের অসুবিধায় ফোনটা কেটে যায়।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply