দেবপ্রিয় গোস্বামীর কবিতা

১

হাতের ওপর হাত রেখে ‘ ওয়ে টু আমেরিকা ‘
বলাটা , যতটা সহজ –
তার চেয়ে একশো গুন বেশি সহজ
আমার অ্যাবডোমিনালে ওই গরম সূঁচের দাগ !

হাইওয়ের প্রচণ্ড ভিড়ে
কখন যে ট্রাফিক আলোটা সবুজ থেকে লাল হল ,
আমি বুঝিনি । তুমি বুঝেছিলে ?
মুখোমুখি দুটো গাড়ির কলিশন্
একটা কান ফাটানো শব্দ –
তোমার বুকে আমি তখনও সেই
জ্বলন্ত সানফ্রান্সিসকো দেখেছি ,
আবছা , কিন্ত ম্যাচিওর্ ।

আমি শুনেছি , সানফ্রান্সিসকোর হাইওয়েতে
ট্রাফিকের আলোও খুবই দায়িত্ববান
শুধু আমিই কেয়ারলেস্ ।
তাই আজ পেটের দায়ে যখন তোমার কথা ভাবি ,
আর ভাবি না হাইওয়ের কথা ,
ভাবি না সানফ্রান্সিসকোর কথা …

২

সাদা কুয়াশার আড়ালে আমার জগত
ব্যালকনি থেকে চারফুট লাফালেই
ফ্যান্সি লেন , হাইওয়ে
সেখানেই দুনিয়ার যানজট্ , বাস – ট্রাম
কখনও কালো বেড়াল রাস্তা কাটছে
ইঁদুর মরার গন্ধ
আবার ফুটপাত জুড়ে বাবু সাহেবের ভিড়
হকার , পোকার , মদের আড্ডা , জুয়ার ঠেক –
ওখানেই তো তোমার বাড়ি ;
মনে হয়
ছাদের ডালিম টব থেকে টুপ করে
তুলে নিয়ে আসি
এক – দু মুঠো ডালিম ফুল
একখানা শাড়ি চুরি করে উধাও হয়ে যাই ,
সোফা কাঁদুক
আমিও কেঁদেছি , তবুও পাইনি
আজও বুঝি না , কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে !
আচ্ছা তুমিই বলো
৪২ এর শ্রমিক , নালন্দা , ভারত ছাড়ো
যদি সত্যি বলে ধরে নিই
আর এই যে তোমরা এখন কথায় কথায়
‘ ব্ল্যাক ডে ‘ পালন করো
এসব ? সত্যি ?
আমি তো আজও সোলার ল্যাম্প হয়ে
হাইওয়ের যন্ত্রনাই দেখি
বিধাতা দাবার চাল চালে
আমি কেবল উত্তর দিই ।

৩

বহুদিন নিজের ছায়া দেখিনি ।
বহুদিন কুয়াশা মাাখিনি গায়ে ।
এখন হাত কাটলে সেই তথাকথিত ব্লাড স্যাম্পল্
আর খুঁজে পাইনা ।
সোজা রাস্তায় গাড়ি চালালে
এখন উইন্ডস্ক্রিনেই রক্ত ঝরে পরে –
শিরায় শিরায় কার্বনপোড়া দাগ
আর গরম সালফারের গন্ধ
এসব আমি সহ্য করতে পারবো ?
আমার নোংরা হাত ? নোংরা কলার ?

শরীর নেই ।
থার্মোমিটারের কাঁচ ফেটে
ছিটকে পড়েছে ইথার
আর ঘরের কোণের লো পাওয়ারের বাল্বটা
প্রশ্ন করছে আমায় –

ইউরো নাকি ডলার !