মল্লিকা পাইকের এক গুচ্ছ কবিতা

বিলীন সাধ

কখোনো সমুদ্র দেখিনি।
সেই সমুদ্র -যার অতল গভীর স্পর্শ আমায় কোমলতায় মুড়তে পারে।
দিনে দিনে মাটি হচ্ছে রুক্ষ।
বিষন্নতায় ছেয়ে গেছে হরিৎ মনভূমি।
না- কোনো কম্বুকণ্ঠে কেঁপে ওঠে না এ তটভূমি।
আজও প্রতিটা একাকীত্বে প্রাণে ওঠে সেই অজানা জলরাশির প্রবল উচ্ছ্বাস।
কখোনো মজ্জায় মজ্জায় ওঠে রক্তের প্লাবন।
হাওয়া বিলাসী যন্ত্রটা আজকাল বেশি অকেজো হয়ে বিরক্ত করছে।
শরীরী মেদ মজ্জায় বিকল হচ্ছে বুদ্ধি।
ফেটে পড়তে ইচ্ছা করে ক্রোধে ক্রোধে।
তাও দেখি কী অনাবিল মেকি আনন্দে ভালো আছি ঘোষণা করি।
মাঝে মাঝে ইস্তেহার দিতে ইচ্ছে হয় ২৫ বছরের শৈশবকে।
কাগজ পাই তো কলম নাই- কলম এলে কাগজ হাওয়া।
ইস্তেহার দিতে ভুল হয়, পড়ে থাকে গদি আঁটা শখের শয্যায়।
দেরি হচ্ছে, বড্ড বেশি দেরি হচ্ছে- ইস্তেহার জমা করার।
মাথার ওপর জমাট বাধা সমুদ্রে স্নান করার ইচ্ছায় না হয় আরও কিছুটা ভুল বাঁচি,
গত হোক ইস্তেহার জমার দিন।

 

ফিরে দেখা

আবার আসব….
যেমন এসেছিলাম আগে আমন্ত্রণ ছাড়াই।
বিরক্তির পারদ নামলে, শব্দের ঝড় থামলে,
আবার না হয় আসব।
যতদিন সাক্ষাৎ না হয়, ততদিন কুয়োতলায় আঁখি ছেঁচা জলে বারবার ভিজিয়ে নেবো তুলোট কাগজে মুড়ে রাখা একান্ত স্মৃতিকে।
তুমি হয়তো থামবে না,
চলার অবিরাম গতিতে তুমি বইবে নদীর মত।
তোমার পথের বাঁকে যে কাঁটা পাবে
জানবে সে আমারই।
ক্ষত সারিয়ে আবার যেও…
পথ চলতে ক্লান্তি তো আসবেই।
তাও… জীবন হোক গতিময়।
পথপ্রান্তে যেমন থাকে
কিছু গন্ধহীন নামহারা ফুল
তেমনই থাকব।
চিনে নিতে যদি ভুল হয় তোমার, তাও
মাথা নত করব চরণ তলে।
যদি মনে পড়ে পুরোনো এ মুখ,
ভুল করে যদি তুলে নাও
আবার হবে দেখা দু ‘নয়নে।

 

শখের জীবন

আবার আমি ছোটো হবো,খুব খুউব ছোটো।
নতুন করে জন্ম নেবো।
রোদের পাতায় লুটোপুটি, পরাগ মেখে রঙিন হব।
সেদিন তুমি কী বলবে?
রোদের পাতায় মন মেলবে?
কেমন হবে সেই খেলাটা?
এই যে খুব শখের জীবন,বেরঙিন দিন,
রোজ পুকুরে ডুব সাঁতারে জলের আলিঙ্গন_ কোথায় পাব?
তাও, নতুন করে ছোটো হব।
আবার যদি নৌকা ভাসাই ছাঁচের জলের কোলে,
তুমি কি খুব রাগ করবে?
থাক না তোলা সেসব কথা,ছোট্টো হওয়া বাকি।
হতে পারলেই চিঠি লিখব, জীবন খামে ভরে।

 

শেষ চিঠি

চললাম…..
যেমন নীরবে এসেছিলাম তেমন নীরবে নয়।
জানিয়ে আসিনি কাউকেই,
কিন্তু এই যে যাচ্ছি, তা সবাই জানবে।
কিন্তু বুঝবে না।
যখন এসেছিলাম তখন দরজায় আলতো ছোঁয়া দিয়ে বুঝিয়েছিলাম এসেছি।
সে আলতো ছোঁয়া যে কখন বজ্রপাত হয়ে
আকাশ- বাতাস বিদূরিত করে
এ পৃথিবীর প্রতিটি গোপন কোণায় জানিয়ে দিয়েছে আমি যাচ্ছি—
তা বুঝি নি।
ভালো থেকো—
যেমন ভালো থাকতে চাইতে।
আমার ফুলের বাগানে জল দিও না।
জানি তোমার মনে হিংসার স্থান নেই,
তাও, গাছেরা জানুক আমি বড় স্বার্থপর।
তোমার খেলার মাঠে রোজ যেও,
ঘাসগুলো আবার আদরে ভরাক তোমায়।
পছন্দের চুরুট প্রয়োজন হবে বোধহয়—
তাও জ্বালিও না।
পাঞ্জাবিগুলো আর নামিও না আলনা থেকে—
ওরা শান্তিতে ঘুমাক।
মাউথারগানে সুর তুলো…
হয়তো হাওয়া বিলাসী সুর
আমার কপাল ছুঁয়ে যাবে চিরঘুমের সময়।
প্রিয়জন হতে পারি নি- প্রয়োজনে লাগব না।
তুমি থেকো….
আমি যাই।

 

ভালো লাগলে শেয়ার করুন
Avatar photo

By মল্লিকা পাইক

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে এম. এ পাশ করেছেন। পেশায় শিক্ষিকা। কলেজ জীবন থেকে লেখালেখি ডায়েরিতে ঢাকা থাকলেও লকডাউন পূর্ববর্তী সময় থেকে বিভিন্ন ম্যাগাজিনে লিখছেন। লেখার বাইরে বর্তমানে গান করেন আবৃত্তি করেন। এছাড়া শখ নিজের মত আঁকেন, পোশাকে ফেব্রিক করেন।

Leave a Reply