চারটি কবিতা
১
এই গোধূলির রং বিক্ষিপ্ত কিনা জানি না
ভূতেদের সঙ্গে কৃষ্ণচূড়ার শত অমিল
ধূলা নেই বালি নেই মিশ্রসুরের
পটভূমি রচিত নয় জিৎ ও হারের
এই বিবাহের লোকারণ্য প্রতীয়মান কিনা জানি না
ক্ষান্তি না থাকলেও তুমি আছো সিঁড়ির কাছে
সাহচর্য ম’রে গিয়ে বিচ্ছেদ এসেছে নিশায়
সেইকালে রাতের খড় মিলবে কিনা জানি না
এই জন্মের অভিযোগ পাহাড়ে একাকার কিনা জানি না
বনময়ুরের ধ্যানে চলমান ফুলের আউষ ছন্দায়িত
বিপুল মেঘের মনস্বীতে আঙুলের বাড়িঘর শিলার
সে শিলার পাথরগুলো পাখিদের পৃথক কিনা জানি না
জানি না জানি না পত্রাবলীর যোগে কোন বৈষ্ণব
বিয়োগের চড়কে কোন পথসঙ্গীর সাবধানতা মন্দ্রিত
শোনা যায় না স্বর্গের থেকে কেউ ফিরে এসেছে
নরকের দ্বারে কেউ ব’সে থাকে কিনা জানি না জানি না
জানি না জানি না ঈশ্বর কোন শ্যাওলার কোন ভগবানের
কোন দেবতা দ্যাখায় পথ মানুষের
দীঘির পাড়ে কোন অমাবস্যার চাঁদ ম’রে যায়
জানি না জানি না কোন মহাকাশ সাগরকে ভৈরবী শোনায়।।
২
জীবনানন্দ দাশ-এর মেয়েকে বিয়ে ক’রতে চাই
আমার কোটি কোটি টাকা আছে
শুনেছি আপনার অনেক পাওনাদার
শুনেছি আপনার অনেক ঋণ
কোনো জামা প্যান্ট টি-শার্ট নেই রঙিন
শুধুমাত্র ধুতি পাঞ্জাবি প’রে থাকেন
তাও নাকি অসাধারণ নোংরা
এবং কুঞ্চিত আর মলিন
আমি আপনাকে সুট-বুট কিনে দেবো
কিনে দেবো বিদেশী কোম্পানির দামি ব্লেজার
আর প’রতে হবে না নোংরা ধুতি পাঞ্জাবি
আর কোনো প্রকাশকের কাছে কবিতা পাঠিয়ে–
চিঠি লিখে চাইতে হবে না চার-পাঁচশো টাকা
আমি আপনার সংসার সামলাবো
আমি আপনার সমস্ত দেনা-পাওনা
পরিশোধ ক’রে দেবো
আমি আপনার সারাজীবনের দায়িত্ব নেবো
আমি শুধু চাই আপনি বেঁচে থাকুন
আপনার ট্রাঙ্কভর্তি অপ্রকাশিত উপন্যাসগুলো
নিজের নামে প্রকাশ ক’রুন
কোনো বীমা কোম্পানির অ্যাজেন্ট হিসাবে
আর আপনাকে কাজ ক’রতে হবে না
আর আপনাকে চাইতে হবে না অসহায় অবস্থায়
কারুর কাছে চাকরি
আমি চাই আপনার জীবনে না হোক ট্রাম দুর্ঘটনা
আমি চাই আপনার অকালমৃত্যু না হোক
মাত্র পঞ্চান্ন বছর বয়সে
প্লিজ আমাকে আপনার পাশে দাঁড়াতে দিন
প্লিজ আমাকে আপনার জামাই ক’রে নিন
ওহে মহাপৃথিবীর বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাশ
আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে ক’রতে চাই।।
৩
গ্রামের মানুষজন বিষধর সাপ দেখলে-ই মেরে ফ্যালে
আমি আমার সন্তানসন্ততিদের বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে
বিষধর সাপ পুষেছি
যেমন শঙ্খচূড়। অ্যাট্রাক্টাসপিডিডি। ব্লাক মাম্বা। কিং
কোবরা। ওয়েস্টার্ন গ্রিন মাম্বা। হাইড্রোফিলিস বেলচেরি।
তা ছাড়া একটা সুবিশাল অ্যানাকোন্ডা
আমি আমার সন্তানসন্ততিদের বিষ খাইয়ে মেরে
ফেলেছি কারণ
যাতে ওরা কোনোদিন বড়ো না হয়
যেন বয়সে স্বাবলম্বী হ’য়ে সাপ না মারে
আমি ম’নে ক’রি প্রত্যেক মানুষের-ই প্রয়োজন
নিজের আত্মীয় স্বজন মা বাবা বন্ধু বৌ
ছেলেমেয়েদের মেরে ফ্যালা
যাতে পৃথিবীর বিষধর সাপেরা সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারে।।
৪
এই মৃত্যুর পরে আবারো দ্যাখা হবে কমলালেবুর বনে মা
কলকাতার মাগিদের নিয়ে সংসার করা যায় না ব’লে-ই
আমি পৃথিবীর কোনো মাগিদেরকে ভালোবাসি না
নাতিদূরে মেখলা কোনো মেয়ের পায়ের নূপুরে
আমার উদ্বেল উচ্ছল দখিনাবায়ু নাচে মহাকালীর মতন
জীবনের দীর্ঘায়ু শেষ হ’য়ে আসে তাই
তোকে ম’নে পড়ে মধ্যরাতে মা
মাঠ যাচে বাবা ভেসে যায় ঠাণ্ডা সমুদ্রের কাছে
আমি রঙ্গিলা এক তটিনীতে সুহৃৎ-হাতুড়ি শুকাই
আমি লুকাই শ্লথ জানলার থেমে থাকা ট্রেনের ছন্দে
স্ফটিকের নীলালো নাই প্রস্তাবো নাই কোনো প্রেমের
ঠিক অকল্পনীয় ভাবে এই জীবন খোলাদরজা পেয়েছে
একাকীর অসম্ভব মৃত্যু উদযাপনের
কখনো ভাবতাম নদীকে ঠ্যাঙাতে পারলে ভালো হ’তো
কখনো ভাবতাম শ্মশানে গিয়ে মড়া পোড়ানো আছিলো ভালো
কখনো ম’নে হ’তো পাহাড়ের নিঃসীম নিঃসঙ্গতা আমার-ই জন্য
কিন্তু এই সব অনন্য সদিচ্ছা আমার আর ভালোলাগে না
শুধু-ই তোকে তোকে তোকে-ই ম’নে পড়ে মা
ভাঙাচোরা পুরোনো বাড়িটার রং ধ্ব’সে যায়
হিমানী-সম্প্রপাতের পাটাতনের জং ধ্ব’সে যায়
শিশিরের মরুভূমিতে পুর্নযাত্রা শুরু হয় মরণের
রাতকানা পাখিদের সনির্বন্ধ হাঁক ভয়ঙ্কর তরণীঘাটের
সন্ধ্যামেঘের বাসি কাপড়চোপড়ে মোমের গ্রাস সুতোর
এই অপার্থিব ধূপধুনোচন্দন দেহের শর্বরীর আয়না
আত্মবিসর্জনের মৃতদেহরা আমার পথপ্রদর্শক
আমি ঘোরঅন্ধকারের মহাকাশের তারার অপরূপ দর্শক
আমার শরীর ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় শেয়াল শকুন হায়না
এখানে শুধু-ই তোকে তোকে তোকে-ই ম’নে পড়ে মা
তোকে-ই ম’নে পড়ে মা।।