পল্লব গোস্বামীর পাঁচটি কবিতা

প্রতীকী ছবি

বোনের জ্বর আসার দিনে
( মিষ্টুকে )

আমার বোনের জ্বর আসার দিনে
জারুলফুল
বড়ো একাকী ঝরে যায় …

বোনের সাথে বহুদিন কথা হয় না আমার।
বহুদিন দেখিনি,
বোনের বাড়ির দরজায়
সেই বৈঁচি ফলের বাগান

আড়ালে আড়ালে
আলোকলতা গাছের ঢেউ
আলগোছে এসে
আমার আত্মা কাঁপিয়ে দিয়ে যায়…

কাঁপা কাঁপা পথ থেকে,
কেবলই মনে হয়
বড়ো করুণ চোখে, এই যেন
বোন এসে দাঁড়িয়েছে আমার

বোনকে আমার
মা মা মনেহয় ফের ….

 

বর্ণপরিচয়

বাবার ক্লান্তির পাশে
আজকাল নিজেকেই অক্লান্ত লীন হয়ে যেতে দেখি।
আমাদের ছোট্ট দোকান। দোকানের নাম দুঃখপরিচয়।

দুঃখভঞ্জনের আশাবরী গান হয়ে
মাঝেসাঁঝে সোনা যায়
কৃষ্ণ-সুদামার কীর্তন

ক্রমশ কাটতে থাকে কীর্তনের তাল।

যেন, পিছনে ফেলে আসা কোনো এক প্রাইমারি ইস্কুলের, অলীক কিছু রেশ হয়ে

সেই তাল থেকে,

ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে থাকে
বিশাল এক,
অ-এ অজগর সাপ…

 

গোয়ালঘর

গোয়ালপুজোর পরেও দুঃখ ঘোচে না অবলা গোরুগুলির। গোয়ালঘরের লোনালাগা দেওয়াল, তার সাথে ফুল পাতায় অসময়ী বৃষ্টি

বৃষ্টি খেয়ে নেয় টালির চালা। ভেজা চালগুঁড়োর সাথে চৈতিফুলের অভিমান

অনেক গভীর রাতে ভাঙা দনে, ছানি কেটে দিয়ে ফিরে আসেন বাবা। বাবাই বোঝেন, সেই বৃষ্টির তোড়। যে তোড়ে, গোয়ালঘর গলে গিয়ে, দাঁড়িয়ে থাকে শুধু, এক নৌকার ছই।

 

সহজপাঠ

এমন আবহাওয়া ভালো।
আধোঘুম জাগরনের ভিতর, কেমন ধ্যান মতো আসে।
ধ্যানের ভিতর ভিড় করে,
ভোরের পরীরা।
ভ্রমর ডাকতে ডাকতে,
তারা আমাকে ভুলিয়ে নিয়ে চলে যায়,
শতাব্দী পেরোনো,
সেই স্বপন ময়রার দোকান।

দিনমান স্বপ্নে দেখি—

সহজ বউটি, মাথায় ঘোমটা জড়িয়ে
আজও
বুড়ো ষষ্ঠীবটতলায়
রেখে আসছেন বুনো খেজুরের মানত

বউটির ছেলেটি সেরে যাবে।
সেরে গেলে, সেও একদিন আমাকে

দেখিয়ে নিয়ে আসবে,
ব্যাঙাচিদের বিয়ে

সামনেই বুঝি তার,
পদ্মবিলের বাগান !

 

অভিমান

মায়ের পাশে শুয়ে থাকে মায়ের না বলা অভিমান
যেমন শালুকফুলটির পাশে পানকৌড়ি

পানকৌড়ি নড়ে না, চড়েও না
কিংবা পানকৌড়ির পাশে ফুটে থাকে পাহাড় গলানো সকাল
আমি সেই পাহাড়ের পাশে শান্ত ঝরনা হয়ে গিয়ে বসি

আমার সাথেও লুকোচুরি খেলে যায়
শালুকের শীতলতা

 

ছবি – নন্দলাল বসু

ভালো লাগলে শেয়ার করুন
Avatar photo

By পল্লব গোস্বামী

পল্লব গোস্বামীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা, পুরুলিয়া জেলার মানবাজার মফস্বল শহরে। মানবাজার রাধামাধব বিদ্যায়তনে পড়াশোনা করেছেন। রামানন্দ সেন্টিনারি কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক। পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্য ও সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা। লেখালেখির শুরু ২০১৫ সাল নাগাদ। লিখেছেন দেশ, কৃত্তিবাস, কবিতা আশ্রম, কবিসম্মেলন, মধ্যবর্তী সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কবির প্রতিমুহূর্তে কলমের সাথে মৈথুন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ:- "সারাক্ষণ মেঘ ও ময়ূর"। "শীতলপাটি" তাঁর দ্বিতীয় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।

Leave a Reply