উৎসব
উনুনপোড়া ছাই, এই আমাদের পুরানো দিনের সখ্য! প্রেতক্ষুধা জেগেছে পশ্চিমে। রিক্ত হৃদয় নিয়ে সে এসেছে ঘাটে। ঘাটের জলে সন্ধ্যার নিবিড় রক্তিম— ক্রমাগত ম্লান হয়ে যায় দৈন্য। পাখিদের একান্ত গোপন হৃদয় থেকে খসে পড়ে হেমন্তকালীন আহ্বান। হে কুয়াশা, নির্বাক বধ্যভূম ছেড়ে শরীরে তোমার স্তব জ্বালি—আদিম নির্বাপিত আলো।
ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসে কাকেরা। চরাচরে জেগে ওঠে একটি মুগ্ধ রুপোলি সাপ। বিষের গভীর মনস্তত্ত্বের বাহ্যটি জোৎস্নায় হেঁটে যায় ক্ষেত্রপালের শরীরের ভিতর।
উনুনপোড়া ছাই, ভিখিরি হৃদয়ের ভিতর মধ্যরাত অবধি খেলা করে; সে ছোটে,আমরা ছুটি। স্বেদ ফেলে রাখি, উনুনপোড়া ছাই,তার ভিতর!
মাটি
প্যালেস্তাইন থেকে মাটি এনে—
ভাইপোকে দিলাম;
সে বুদ্ধের মূর্তি বানালো
ভাইঝিকে দিলাম;
সে লেনিনের মূর্তি বানালো
আমি হাতে নিলাম কিছুটা
দাউ দাউ করে পুড়ে উঠল তালু
নভেম্বরে এই আগুনপোড়াআলো
সভ্যতাকে মনস্তাপ ভেঙে
রাস্তায় নামতে ডাকে?
নৈরাজ্যচিহ্নস্তুতি
স্নানঘরে জেগে থাকে গভীর আর্তনাদ
অশ্রুরস—গাজনের সন্ধ্যার সন্ন্যাসী বিলাপ
তোমাকে দেখতে থাকি অনর্গল ভ্রমে
ঘষাকাচের গায়ে প্রতিবিম্ব ভেবে—
জানালায় হাত বাড়াই…
মৃত গাছগুলো,স্বজন হারানো ব্যথাবিষ—
যৌবন বসে আছে বিমূঢ় হয়ে,যৌবন চলে যায়
সূর্যাস্তের দেহে…
ফুলের কি দায় আছে বলো?
আমাদের রোমকূপে দংশন ফোঁটে…
কাল
কাল—
আনত মুখের সামনে রেখে যাচ্ছি মৃত ঘাস
জ্যোৎস্নার পবিত্র সঙ্গমে
খিদের ফসিল যেন
ছড়িয়ে থাকবে মুখের আশেপাশে
বসন্ত! নিঃশ্বাস, বুনো পশুদের মতো দৌড়োয়
প্রতিটি মানুষ যেন ফুরিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত।
ক্রোধ
বসিয়ে দিচ্ছি তীক্ষ্ণতম কামড়—
যত্রতত্র, যেথায়-সেথায়।
অতিমানবিক হিংস্র ঠোঁট:
যেন দাবানল জ্বলে ওঠে মধ্যরাত্রের হিম ভেঙে
মুঠো মুঠো গার্হস্থ্য কোষ
বিসর্জন দিয়ে দিই মায়াপ্রবৃত্তি
এ জীবন, উন্মাদ-তপস্যাব্রত
ঠোক্কর খেতে খেতে উড়ে যাই নদীস্নানে
গ্রাম-শহর হীন উদ্বাস্তু মানুষ,
আমারই তপস্যাভ্রমে জমিনে জমিনে ক্রোধ ভেসে যাচ্ছে