কুন্তল কোলের কয়েকটি টুকরো গদ্য

আমি শুনেছিলাম সে ‘না’ বলেছে , কিন্তু কেন যে না বলছে! তার কি সিগারেট ভালো লাগছেনা এখন? নাকি ভাঙা আয়নায় মুখ দেখা অশুভ সে সেটা মানতে চায়নি, মেদিনীপুরের মেয়ে হাওড়ায় বৌ হয়ে এসেছে বলে ঝগড়ার সময় তার কথাগুলো বোঝা যাচ্ছে না, আবার এটাও হতে পারে তারা পাশাপাশি শুয়েছিল সারারাত আর মেয়েটা কান্নার শব্দ শুনতে পেয়েছিল, আর ওর কি বাচ্চা চাইনা? ব্লোজব দেবে না সে এরম কিছু? মশারি টাঙানোর পালা কি আজ ওর ছিল? ফোনে আজ ‘আই লভ ইউ’ বলে ম্যাসেজ এসেছে, ওটা কি কোন গোপন প্রেমিক ওর? বাড়িতে কি চিনি শেষ হয়ে গেছে? খুব ফ্যানটাসটিক একটা ব্রা পছন্দ হয়েছিল ছেলেটির, বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে স্মৃতি শক্তি কিছুটা হলেও লোপ পেয়েছিল, একশো গ্রাম ছাতুতে পঁচিশ গ্রাম প্রোটিন থাকে? লাল বিড়ালও রাস্তা কাটলে অশুভ কিছু হয়? ওই পাখি গুলো নাকি মাটির অনেক নীচে ওড়ে, ওরা নাকি মানুষের কথাবার্তা শুনলেই মরে যাবে, দরজা বন্ধ থাকলে জানলা দিয়ে ঢোকা যাবে না? ওর ছেলেটা জুয়ারী? ঘরে কোন গুপ্ত ক্যামেরা? কোন রাস্তা? আমি শুনেছি অনেক বাড়ির বেসমেন্ট মানুষ কাটার জন্য ব্যবহার হয়।
কিছু কথা আছে। আজ ভোর ভোর রক্ত কিনতে যাবার নেশা উঠেছিল। এক ইচ্ছেকে মেরে ফেলবার জন্য দ্বিতীয় ইচ্ছে দরকার। ভোর ভোর তারপর রক্তের বদলে আঙুর কিনতে বেরিয়ে ছিলাম। আঙুর বিষয়টা নিয়ে ভাবছি সেদিনের পর থেকেই,যখন মেয়েটা বলল-আমার শান্তি চাই,আর আমি বললাম – কাল সকালে খুঁজে দেখব আলমারিতে আছে কিনা,দুটো কালো মুখের ইমোজির পর মেয়েটি একটা ছবি পাঠালো,যাতে একটা সিনেমার পোস্টারের ওপর গানের মূল অক্ষর গুলো লেখা আছে ইংরেজীতে- আমার আগুনের ছাই।আমি একটু নেশায় ছিলাম, পড়লাম- আমার আঙুর চাই।ঘন্টাটা বেজে গেল মনের মধ্যে,আঙুর শুকিয়ে কিসমিস হয়, কিসমিস ত্রিশ টাকায় একশো গ্রাম পাওয়া যাচ্ছে জীবনে,যখন স্কুলে পড়ি সজল ওর নুনুতে হাত দিয়ে বলেছিল-দেখ নুনু শুকিয়ে কিসমিস হয়ে গেছে শীতে,ও ছিল বিপ্লবীদের একজন ,আমরা সবাই শীত এলেই নুনুকে শুকনো লঙ্কার সাথে তুলনা করতাম কিন্তু সজল একমাত্র ছিল যে ওইরম সুস্বাদু রসালো ফলের বিবর্তনের সাথে নুনুর তুলনা ঘটিয়েছিল।
আমি রুমন বলছি।আজ সকালে জিন্সের চেনে নুনুটা আটকে গিয়েছিল।সেই মূহূর্তে যখন উপরের চামড়ায় একটু রক্ত দেখা দিয়েছে,টানতে টানতে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি,যার নুনু চেনে আটকে নেই সেই পৃথিবীর একমাত্র সুখী মানুষ মনে হচ্ছিল,আমার বিশ্রামের দরকার এবার।বিশ্রাম অর্থাৎ ভাবনা।এখন যদি নুনুটা খসে পড়ে যায় একটা কুকুর কি ওটা মুখে তুলে নেবে?পিঁপড়ে গুলো তো দেখছি না,ওরা কি নুনু খায়?নুনু খসে পড়লে যোনি বসাতে হবে,প্রচুর খরচ।হাততালি মারলেই হিজড়ে।বুকে বাতাবিলেবু লাগিয়ে সিগন্যালে -এ বাবু দেনা-করব?দূর শালা হাততালি দিলেই হিজড়ে হয়না,সার্কাস সিনেমায় বসে দর্শকের হাততালি শুনতে পাচ্ছিলাম।
হাঁড়িটা ওভেনের ওপর বসিয়ে মা আর আগুন জ্বাললেন না ,আমি দালানে একটা চেয়ারে বসে পাটা টেবিলে তুলে দিয়ে সিনেমা দেখছি।পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম মা আমার দিকে দেখছেন।আমি আরো একটু পিছনে তাকিয়ে দেখলাম হাঁড়ি চড়ানো কিন্তু আগুন জ্বলছে না।আমি মাকে বললাম-গ্যাস জ্বালতে ভুলে গেছো নাকি? মা বললেন-ছোটবেলায় আমার হাতে তরকারি পড়ে গিয়েছিল ,উফ সে জ্বলন তোকে বলতে পারব না, তখন তো বার্ণল ছিল না, মাজনও ছিল না, আমরা ছাই দিয়ে দাঁত মাজতাম, ওষুধ ছাড়াই কিভাবে যে ঠিক হয়ে গিয়েছিল পোড়াটা মনে নেই কিন্তু সে জ্বলন এখনো মনে আছে,সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম আগুনের তেজ,আমরা তো শুধু রান্নার জন্য আগুন ব্যাবহার করি কখনো হাত মুখ ঢুকিয়ে দেখিনি ,আজ একটু আতপ চালের ভাত করব ভেবেছিলাম,সাদা ধপধপে চাল, কিন্তু আগুন জ্বালালে যদি ওই ভাতের রঙ আমার পোড়া হাতের মতন হয়ে যায়!ভয়ে আর গ্যাস জ্বালাতে পারছিনা,তুই জ্বেলে দিবি?
আমরা তিন বন্ধু।আমি আকাশ আর বিশাল।বিশাল আর আকাশকে ভূতে পেয়েছে। আকাশকে আকাশ বলে ডাকলে ও বলছে-আমি বিশাল। বিশালকে বিশাল বলে ডাকলে ও বলছে -আমি আকাশ। আমরা জানি এ আকাশ বিশাল, বিশাল এই আকাশ। সেদিন একত্রিশে ডিসেম্বর,আমরা বাজারে গেছি ফিসটের জন্য, সব টাকা রাখা ছিল আকাশের কাছে,আকাশকে যখন বললাম টাকা দিতে বিশাল পকেটে হাত ঢুকায়ে টাকাটা দিয়ে দিল।স্কুলে যখন রোলকল হয়,আকাশ তখন বিশালের রোলে প্রেজেন্ট দেয় আর বিশাল আকাশের রোলে।এটা কি প্রেম?এর পর থেকে ওরা আমায় এড়িয়ে যেতে থাকলো।পরীক্ষার হলে ঢুকতে হলে আইডেনটি কার্ড গলায় ঝোলে।আকাশ বিশালের কার্ডটা পড়ে ঢুকছে বিশাল আকাশেরটা।ওরা ভুলে যাচ্ছে নাম এক হতে পারে কিন্তু চেহারা নয়।ওমা! আস্তে আস্তে বিশাল আর আকাশ হুবহু এক হয়ে গেল।এত এক হল কে যে কার মত হল বোঝা যাবে না।
ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply