আয়ান ঘোষের কথা কেউ লেখেনি

ছত্র খন্ড

বাইরের গর্জন থেমে গেছে দেখে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি,

অনেকটা সুর লাগিয়ে যে বুড়ো লোকটা

তোমার নাম ধরে ডেকে গেছে,

আমি তার খোঁজে আজ কুঁয়োতলায় উঁকি মারব

সন্ধ্যের প্রদীপ নিভে গেলে যখন চাতালটা নারীস্পর্শরহিত,

তখন

তখন আমি নতজানু হয়ে তোমার বিছানার পাশে বসি

আর নিজহাতে দরজা আলগা করে রাখি

তোমার অভিসারের প্রত্যাশায়

 

বংশী খন্ড

“দরদ দিয়ে গাইতে হবে, আরো দরদ দিয়ে”

বাবার কথা মনে করে তার একতারায় বৃষ্টি নামে।

বৃষ্টিফোঁটা জমতে জমতে উঠোন ভাসিয়ে কুঁয়ো অবধি নেমে আসে;

কোমল মা ঠিক যেইখানটায় গিয়ে তোমার খবর রেখে আসে,

সেখানে বসে আমি তার পরাজয়ের অপেক্ষা করি,

আর পাথরে পাথরে ঘষে বেতালা স্ফুলিঙ্গ ঢেলে যাই আরো গভীরে।

এ সত্য কীভাবে মেনে নিতে হয়, তা কেউ শেখায় নি আমাকে

‘তোমার নাম তো আমি এভাবে নিতে পারি নি!’

 

দান খন্ড

আসলে আমার কিচ্ছু দেওয়ার নেই,

আসলে আমি তোমায় ভিক্ষা করি,

আসলে সব কথার ফাঁকে ফাঁকে মাধুকরী তোমায় দিয়ে যাই

চিরাচরিত যত অলঙ্কার, প্রেমের নামে, বাতিল হওয়ার পথে

সেসব আমি লুকিয়ে নিয়ে আসি,

আসলে তোমায় সেইগুলোই বলি

ঘষেমেজে নিজের মতো করে;

তোমার সাথে একই সংসারেথাকার কথায় আনন্দ হয় খুব,

তোমার সাথে একই সংসারেথাকার ভয়ে পালিয়ে যাই আবার,

না পেয়ে রোজ তোমায় ভিক্ষা করি

এইটুকুতেই সাজাই সংসার;

তোমার প্রতি এই তো আমার প্রেম,

তোমার কাছে এই তো প্রত্যাশা,

আসলে আমি তোমায় ভিক্ষা করি

আসলে আমার কিচ্ছু দেওয়ার নেই!

 

নৌকা খন্ড

বিভিন্ন দুর্বলতাকে পুঁজি করে আলোচনায় বসার জন্য কবিতা বানিয়ে রাখি।

এত ধন্দ এত জিজ্ঞাসাসেসব নিশ্চিন্তে ঢেকে দিই মাত্রাবৃত্ত দিয়ে

এরকম সুচতুর পরিকল্পনামাফিক প্রতি সমাবেশ ভেস্তে দেওয়ার পরে,

আমার তোমার মুখটা মনে পড়ে

যখন মেঠো পথের ধারে বিবস্ত্র তোমায় দেখতে চাইনি,

কিম্বা রাতের বাসস্ট্যান্ডে তোমার ক্ষতবিক্ষত শরীরটা দুহাত দিয়ে আড়াল করতে পারিনি

সেইসব ইতিহাস অনুশীলন করা আর হয়ে ওঠে না

বলে লজ্জায় সকলকে ডেকে আনি আবার।

খুব কি দেরি হয়ে গেল?

পরিকল্পনা করি নতুন অধ্যায়ের

যদি অন্য কোনো জন্ম হয় তোমার,

এবার শুধু প্রেমের কবিতাই রেখো

ক্ষতের নিরাময় হবে কিনা জানি না, তবু,

বিশুদ্ধ প্রেমটুকু তুলে রাখা যাক তোমার সঞ্চয়ে।

 

বিরহ খন্ড

বারংবার পর্দা বদলাই, বিছানার চাদর পাতি নতুন রঙের,

সুন্দর গন্ধ দিয়ে ঢেকে ফেলি অন্ধকার…

যা কিছু অভ্যাসবশতঃ তোমার জন্য রাখা থাকে

তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ স্বরাষ্ট্রদপ্তরে এসে গেছে।

তালবাহানার শেষে দেওয়ালঘড়ির ঘন্টার কাঁটাটা দুমড়ে

আমি পাশ ফিরে শুলাম,

পাঁচ মিনিট পরে যখন ঘুম ভাঙবেততদিনে তোমার অভাব হয়তো মানিয়ে নেওয়া যাবে;

কিন্তু, যে প্রতিবেশীয় শত্রুতার স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম

তার মীমাংসা কে করবে?

বাংলা কবিতা, তোমার কাছে এই মর্মে দরখাস্ত দিয়ে যাই

ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply