সূর্য্যায়ণ রায়চৌধুরীর কবিতা

হে পূর্ণ তব

১
তোমাকে কেউ
কোনদিন ছুঁতে পেরেছে?
অন্ধকার নদীর কিনারে
পঞ্জরের কাঁখে কোলে
হাওয়ার হুহু শব্দ…
সমস্ত সভ্যতা, ইতিহাস ও নন্দনের
হাঁফ ধরার করুণ বিজনবাণী
তোমার হাতে আমার আঙুল

ঘেমে যাওয়া তালু

২
চোখদুটি শ্বাপদের মত
অথচ শ্বাপদেরই ভয়ে, জ্বলছে…
মাতৃহীন, পিতৃহীন, সহায়সম্বলহীন
তবুও, আশ্রয়।
অনাদি রঙ্গভূমি… অপ্রাপ্তি চারিদিকে…
মনের অপার কোন মন
চায় পালকের মত কোন গাছের আড়ালে
সন্ধ্যার শেষ মুখ হয়ে চিনবে তোমাকে…
গভীর,
জল পড়ে কোথাও, যেন শূন্য হয়ে এসেছে পৃথিবী…

মেঘ করে এলে
শঙ্খের মত বাজে
দৃষ্টিকোণ।

৩
আমাকে ডেকে ডেকে ডেকে
ক্রমে, ক্রমের অধরে
ছু্ঁয়ে যায় ওষ্ঠতির,–
মৃগ।
উপচে পড়ে ছিলার শব্দ…
ধ্বনি– নির্জন, অরণ্যে হাওয়ার শব্দ।

যেখানে কেউ চেনে না কাউকে।

৪
আজও, যারা বেঁচে আছো
তোমাদের নীল পাহাড় আর প্রজাপতি
তোমাদের চ্যাটালো পাথর
আর জীবনের শ্লোক…
এখনও যারা
পূর্ণ হয়ে আছো…
তিনসত্যি বলছি তোমাদের,
পথ বড় অল্প বাকি আর। এসো…

৫
বাতাস এখানে জোলো,
যদিও তোমাকে সে
ছোঁয় না কখনও।
পাশেই সাপের মত পথ
পর্যটনের গাড়ি, নেমে যায়
অথবা ওঠে…
স্থানীয় দু’-একজন, পিঠে আনাজ-রসদ
ফিরে যায় সুধার গর্ভে।
তোমার গায়ে সারাদিন পাতা ঝরে,
দূরে দূরে শিস দিয়ে দোসরের পাখি
‘গিরিখাদ আত্মার জলে’, সেই কথা বলে…
রোমশ কোন কুকুর
তোমার স্বচ্ছতার পাশে বসে।
গর্ভের মত সুখ, তোমাকে কাঁদায় কেন?
আনন্দ নির্জন, পূর্ণ বলে?

৬

আমি, এক বিশাল অসমাপ্ত puzzle-এর মত
তোমাকে দেখছি, রাত গভীর হয়ে আসছে…
চোখ মুছে যাচ্ছে খাঁজ থেকে খাঁজ বরাবর
সমাধানের ইচ্ছায়। তারপর একজন থেকে
অপরজনে একটা ছোট্ট ছবিকে পূর্ণ করার
জন্য, নিজেকে পৌঁছে দিচ্ছি অতল গিরিখাদে।
প্রত্যেক চূড়া আমার বাহু, প্রত্যেক অন্ধকার
আমার না-হওয়া… এভাবেই আরও-র বাসনায়,
নিজেদের নিজেদের কাছে ভালোবাসা,
একসময় একসাথে ক্লান্ত হওয়া।

যেখানে আমি পূর্ণ সেখানে কোথাও নেই আমি।
বড় একা লাগে, বাজাও অভাবে,বাজাও
পাতায়, বাজাও শৈশবমেঘে, বাজাও আমায়,

যেন সেইসব পাহাড়ের গায়ে মা ও ছেলে, বাড়ি
ফিরে এল।…