মৃন্ময় চক্রবর্তীর তিনটি কবিতা

সূর্য ফেরিওয়ালা
.
আকাশটা যেন রোববার
তাই অলোকনাথ জাল প্রস্তুত করছেন।
আগেই ছেলেরা কলা গাছের সঙ্গে সাঁতার কেটে
ঘুলিয়ে তুলেছে গোঁফ আর জল।
এবার তিনি আশমানি ছাতার মতো জাল ছুড়বেন
ছিটকে রোদের বিন্দুতে উঠবে পুঁটি মৌরলা চাঁদা মাছসকল,
আকাশটা জালের গায়ে লেগে হয়ে উঠবে
ময়ূরের মতো সাদা কিংবা নীল।
খোয়া-পাতা রাস্তায় ভিজে স্বপ্ন হোঁচট খেয়ে
উলটে দেবে নখ।
সূর্যটা বলবে, এই দৃশ্যগুলো আর কয়েকটা মাত্র আছে
নেমে যাবার আগে সংগ্রহ করে নিন।
.
.
নীল লেজঝোলা
.
শজনে ফুলের ডালে নীল লেজঝোলা পাখিটা ভাবনায় পড়ে গেল নাকি?
তলায় বয়ে যাওয়া আদি-খাল নাগরিক নাদ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে রুগ্ন, মন্থর।
সে কি ভাবছে একদিন এই জলে বেলেমাছ দোল খেত,
একদিন ধানবোঝাই নৌকো ভেসে আসত সাতক্ষীরে থেকে গড়ের হাটতলায়?
নাকি এ কথাও সে ভাবছে পালক ঘামিয়ে আনমনে—
ললিতা পিসি দুপুর বেলায় এই জলে ডুব দিলে
ভেসে উঠত তার কেশুত রাঙানো চুল আর বিশাল লাউয়ের মতো দুদ?
এত স্নেহ আজ কোথায় ঝরে গেল, কোন তেঁতুলতলায় রে লেজঝোলা–
এই ভেবে, বলে সে নিজেকেই দুয়ো দিয়ে সন্ধ্যার গায়ে মিশে নিজেই কি দিক হারা হবে?
.
.
রসময় হাঁস
.
তিরিশ বছর আগে মরে যাওয়া রসময় সর্দার
বাস্তুর এক কোণে এখনও মাল টেনে পড়ে আছে নাকি?
ক্ষেতমজুর আন্দোলনের দিন তার স্বপ্নে প্যাঁক প্যাঁক করে উঠল বোধ হয়,
না না, ও তো নরেনদের হাঁস, সাতসকালে চলে এসেছে
পুকুরের পাড়ে, ডান বাম ডাম বাম করতে করতে দল বেঁধে।
কী রংবদলু দিন, ডালপালা ঢাকা কার ডিম কে খেয়ে ফুঁকে দিচ্ছে,
সূর্যই এখন শুধু একলা ফকির, অষ্টরম্ভা;
রসময় সর্দারের শিরীষ ছায়ায় ঢাকা পুকুরের পাড়ে বসে
এখনও তাড়ি খাচ্ছে তিরিশ বছর ধরে।
.
ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply