কাশীতে আমার সিধু জেঠা মানে অজয় দা। একদিন বলেছিলেন—”কাশীকে দেখতে হলে সময়ের গায়ে হাত বুলোতে হয়। আজকের কাশীকে মুছে ফেলো, তবেই দেখতে পাবে তার আসল রূপ।” কথাটা মিথ্যে নয়। এই শহরের রাস্তায় পা ফেললেই মনে হয়, যেন পাথরগুলো কথা বলে, পুরনো ইটগুলো গল্প ফাঁদে। আর সেই সব গল্পের মধ্যে সবচেয়ে মর্মস্পর্শী গল্পটা হয়তো কাশী দেবীর।
একটি মন্দির, অনেক গল্প
এই মন্দিরটাকে চোখে প্রথম দেখলে মনে হতে পারে—এটা তো নতুন। কিন্তু আসল সত্যি লুকিয়ে আছে এর দেওয়ালের গায়ে, এর ধুলোমাখা পাথরে। স্থানীয় মানুষেরা বলেন, এই মন্দিরের ইতিহাস কাশীর ইতিহাসের মতোই পুরনো। হয়তো এর গর্ভগৃহে আজও বাজে সেই প্রাচীন মন্ত্র, যা কানে শোনার মতো মানুষ এখন খুব কমই আছে।
কেন চেনা যায় না তাঁকে?
কাশীতে বিশ্বনাথের জ্যোতি, অন্নপূর্ণার মহিমা, দুর্গার ডাকে সবাই মাতোয়ারা। কিন্তু কাশী দেবী যেন একটু আড়ালেই থাকেন। হয়তো তিনি চান না তাঁর নামে বড় বড় উৎসব, চান না আলোচনা। তিনি তো সেই মা, যিনি শুধু ডাক দেন সেইসব মানুষকে, যারা সত্যি করে খোঁজে। যারা রাস্তার শোরগোল ভুলে, একটু নিশ্বাসের ফাঁকে তাঁর কথা মনে রাখে।
কীভাবে খুঁজে পাবেন তাঁকে?
– সকালের প্রথম রোদে, যখন মন্দিরের চূড়ায় সুয্যি মামা ডানা মেলেন, তখন আসুন। দেখবেন, কাশী দেবী তখন সবচেয়ে কাছে।
– মন্দিরের সামনে বসে থাকা কোনো বৃদ্ধের গল্প শুনুন। হয়তো তিনি জানেন সেই পুরনো কাহিনী, যা বইয়ে লেখা হয় নি এখনো। বেঁচে আছে শ্রুতি তে।
– চোখ বুজে নিজেকে ভাবুন বহু বছর আগের কাশীতে। দেখবেন, মন্দির তখন আর নতুন নেই—সে হয়ে উঠেছে কালের সাক্ষী।
দেবী কথা
কাশী দেবী শুধু একটি মন্দিরের দেবী নন, তিনি এই শহরের নিশ্বাস। তিনি থাকেন প্রতিটি গলির কোণে, প্রতিটি পুরনো ইটের ফাঁকে। অজয় দা ঠিকই বলেছিলেন—সময় একটু পিছিয়ে নিলেই দেখা যায় তাঁকে। হয়তো আজই সন্ধ্যায়, যখন শহরের আলো একটু ম্লান হবে, তখনই আপনি দেখতে পাবেন—কাশী দেবী দাঁড়িয়ে আছেন, আপনারই অপেক্ষায়।
ছবি – লেখক