রহিত ঘোষালের কবিতা

জপমালা

একটা দেশলাই বাক্সের মধ্যে আগুন খুঁজতে খুঁজতে
একটা ফাঁদ তৈরি হলো, সেখানে জ্যোৎস্না
ছাপিয়ে যায় হাঁ মুখ,
বসন্তের জল দোতারার সন্দেহ মুছে দেয়,
মালবাহীট্রেন ব্রিজ ছেড়ে চলে গেলে
নদীর বুকে গঞ্জনা নেমে আসে,
হাঙর গুলি তৃষ্ণা এনে রাখে টেবিলের উপর,
হ্যাজাকের অদৃষ্ট নিভে আসে,
সমস্ত যুগের তন্দ্রার ওপর মরচে পড়ে,
গৃহস্থ বাড়ির সামনে শ্মশান যাত্রীরা এসেছে,
আবার তারা পর্বতের উপর উঠে
যাবে হাঁপাতে হাঁপাতে,
জলমগ্ন মাঠের ‘পরে তাদের পায়ের শব্দ মিলিয়ে যায়,
পরগাছা গাছের দীর্ঘশ্বাস ভস্ম করে জপমালা

 

শিকার

আমার ভাবনার অতলে কী আছে
তা একমাত্র তোমাকেই বলা যায়,
আমার প্রাণ কী দিয়ে তৈরি
তা তোমার কাছে লিখে রেখে গেলাম,
শহুরে নিঃসঙ্গতা আমাকে যখন টেনে ধরে,
আমার মনে পড়ে গ্রাম্য পরবে
কানে লাল জবা মেয়েটার কথা,
সন্ধ্যা মেঘের রথ অল্পকথার কাঁটার মুকুট
পরিহিত তোমাকে আমার থেকে দূরে নিয়ে যায়,
আর তখনই কালো বিড়াল
একটা পাখি শিকার করে…

 

ঝাঁপ

ঝাঁপ দিতে বলে তুমি
স্রোতের দর্প হয়ে উঠলে,
আমি তো তখন উৎসুক-
তোমাকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করি,
লেবাস তুমি নির্ভয়ে খুলে দিলে,
আমি তখন স্বচ্ছ স্ফটিক,
তৃপ্তি নিয়ে গরিমা সুবাসে
সুখীসঙ্গম তৃষ্ণা মেটাই,
রুদ্ধ হৃদয়ে কুঁড়ি হয়ে
ডুব ডুব সাঁতার দিতে তুমি,
স্পর্শ লোভী শরীর তোমার
তাতে অঙ্গার দেব আমি,
আলোছায়া অভ্যাসে
দীপ্ত সোনালি অন্যমনা
নদীপথে তুমি চলে গেলে

 

অনুমান

শুনতে শুনতে
ভাবতে ভাবতে
তবু প্রাণ কাঁদে বালিঘড়ির প্রতারণায়,
শেষ সারিতে বসে সৈকতের অনুমান বুঝে নেই,
আমাদের মধ্যে যে নিহিত
তাকে ফেলে আসি, মাস্তুলে লেগে তখন কুয়াশা,
ভারহীন হয়েছিল তার শরীর, তার খরখরে ঠোঁটে
ছিল এক তুষার দ্বীপ, আর্তি ছিল না বাগানের মতো মুখে,
বৃন্তে বৃন্তে পদদলিত অনুতাপ,
উজা়ড় হওয়া খেত, উপড়ে যাওয়া দাঁতনখের কথা,
আঁকড়ে ধরে সীমা, আধভাঙা গুচ্ছ ফুল,
বিদ্যুচ্ছটা খুব আপন মনে হয়েছিল সেদিন,
আমরা পাগল হচ্ছিলাম নাকি ডুবে যাচ্ছিলাম বুঝিনি,
তবে বরাবরের মতো আমাদের সবকিছু পাল্টে গেল,
আর কে সঙ্গে আছে,
কাগজকলম,
ঠাকুর স্পর্শ করে উঠে দাঁড়াই,
প্রতি গ্রাসে গ্রাসে উঠে আসে যমযন্ত্রণা

 

চপলতা

শান্ত লীলাক্ষেত্রে
শব্দজাল, কথা নামিয়ে আনতে হবে,
লুটিয়ে দিতে হবে পায়ের কাছে সঞ্চরণশীল
বলয়গ্রাস,
বসন্তকাল যেখানে বিদায় নিতে এসেছে
ওখানে নৃত্যরত গাছেদের এখন অবসাদ,
ভীষণ স্থবির হতে চলেছে যে সময়
সেখানে পরিভূত হয়ে যাই,
বিচ্যুত হয়ে যাই,
সাক্ষী হয়ে থাকি
চপল ডালে ডালে পারলৌকিক বশীকরণের

 

ভালো লাগলে শেয়ার করুন
Avatar photo

By রহিত ঘোষাল

দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ এলাকায় ১৯৯০ এর ৯ অক্টোবর রহিত ঘোষালের জন্ম,সেখানেই শৈশব ও কৈশোর ব্যয় করেন। লেখালেখি করছেন ২০০৭ সাল থেকে। জীবনের বিচিত্র সব শিল্প সংস্কৃতি সংক্রান্ত কৌতূহল ও স্বপ্ন মেটাতে ও বাস্তবায়ন করতে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা কলেজ অব্দি। বিভিন্ন রকম পেশা বদলে বর্তমানে একটি ব্যক্তি উদ্যোগের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। কবিতা লেখার আশেপাশে অভিনয় করেছেন মঞ্চনাটক ও অন্তরঙ্গ নাটকে। গান গেয়েছেন এবং লিখেছেন নানা বাংলা ব্যান্ডের দলে,অবসরের ছবি আঁকতে ভালোবাসেন আপন মনে। প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই- "পীড়িত অববাহিকা" প্রকাশ পায় ২০০৩ সালে ।

Leave a Reply