শ্মশান
অরণ্য ও পোড়োবাড়ির মাঝে একঘেয়ে বেজে চলে অন্তরার সুর
শ্মশানে ভিড় ক’রে আছে কিছু জরাজীর্ণ চিল ও শকুনির দল
চিতার লেলিহান শিখা পুড়ে পুড়ে জেগে উঠেছে কয়লায় পাহাড়
পাঁজরে তার অসহায় মফস্বলী ফিক বাঁশের আঘাত
সুদূরপ্রসারী নির্জন ফাঁকা মাঠ স্বজন হারানো শোক বহন করে চলে।
অশ্রুলেপা ভরাট হওয়া পুকুরের
অনতিদূরে ছড়িয়ে আছে বট, অশ্বত্থের শাখা
বৃথা মাত্র জলে কতো কলসি ডোবে
ভেসে চলে মিথপুরাণের ইতিহাস
আনক্ষত্র কাল ধরে কতো চিতার আগুনের সদগতি বয়ে চলেছে।
শঙ্খধ্বনি ভেদ করে অভিভাবকের মতো দাঁড়িয়ে থাকা বকুল গাছটির শান্ত ও শীতল ছায়ায় কতো যুগ আগে
এক অঘোরী চিতার ভস্ম মেখেছিল
বহ্নিশিখায় নৃত্য করবে বলে সন্ন্যাসে না সংসারে না
চিতার পাশে এখনও এলোমেলো হয়ে প’ড়ে আছে তার সুখের তোরঙ্গ।
আকাশের দলছুট মেঘ মনের উঠানে এসে
ঝ’রে পড়ে বাসি চিনে টাগরের মতো।
এক মস্ত বট গাছের ঝুরি নেমে এলো
দুহাত পেতে দিতে চিতার উপর
যেন আগুন ছুঁলেই কোলে তুলে নেবে ,ব্রহ্মশাপ যাতে না লাগে।
শান বাঁধানো ঘাটের পাশে পড়ে আছে
সারি সারি কলসী , কিছু এঁটো করা পিণ্ডের অংশ
আর শবের গায়ে মাখানো শেষ ঘি’ র বয়াম।
একটি দক্ষিণমুখি মন্দির আর পঞ্চমুণ্ডী আসন
শ্মশানকালী লোল জিহ্বা বাড়িয়ে বসে আছেন
অথচ কোনো দৃশ্যত হাঁড়িকাঠ নেই।
বৌয়ের পিটুনি খেয়ে দুঃখ ভোলাতে
যে রিকশাওয়ালাটি দেশির বোতল হাতে
পড়ে থাকে মায়ের পায়ে তাকে দেখি রোজ,
হয়তো গভীর রাতে অশ্বত্থের শাখা থেকে যখন শেষ পেঁচাটিও উড়ে যায় শিকারের খোঁজে
ওই পৌঢ় মানুষটিও কি লীন হয়ে আসে ভস্মে শিবের
কিংবা মানুষের হাতে নয় প্রতিটি হত্যার সাক্ষী হয়ে।
একা একা জ্বলে উঠলে চিতার আগুন
বহ্নিশিখায় নৃত্যের লোভে অঘোরীর বেশে
ওই পৌঢ় লোকটিই হয়ে ওঠে হারানো সাধক
শবের আত্মদহণঘ্রাণের নেশায় একাকী নির্লিপ্তে বসে
কাঁটাছেঁড়া করতে করতে মেপে চলি ব্রহ্মান্ডের বেদনার জল
করালবদনী মেয়ে যেন তারও সদ্য প্রসবিনী মা…
ছবি – লেখক