সৌরভ বর্ধনের তিনটি কবিতা

প্রতীকী ছবি

দেজা ভ্যু

শুধু চোখের আওয়াজ আর দূর ট্রেনের বাঁশি ছাড়া
এমন গভীর রাতেই শোনা যায় স্বচ্ছ রঙের ধ্বনি
চোখ কচলাতে কচলাতে অন্ধকার হলুদ হয়ে আসে
ঠিকরে বেরিয়ে আসে চোখেরই নীল রেখা
আর সেই রেখা বরাবর অস্পষ্ট রোমাঞ্চ, শব্দখণ্ড!

এই রাতে অস্থায়ী লোবের চেয়ে যথাযথ কিছু নেই
যেন এই রাতের জন্যই এতো দীর্ঘ বছরের পরিশ্রম
এতো দীর্ঘ দিন ধরে মস্তিষ্ককে দেওয়া এই ধকল
সত্য এই মাংসল মতে একমাত্র আশ্চর্য হলো তাপ
অতিলঘু সামর্থ্য নিয়ে সে প্রসারিত সমস্ত আকাশে
তুমি তাকে প্রব্রজ্যা বলবে, সৌভাগ্যস্বরূপা শ্রান্ত শিব
অথচ দেখবে সুস্থির জীবনের মতো মাধুর্যময়ী
বিশাখানক্ষত্রের পতন হয়ে গেছে
রূপ বদলে গেছে স্বকীয় চিন্তার খড়ে ——
কিছু অর্বুদ হয়তো তখনও নিজেদের মিড় ও গমক
ধুয়ে ধুয়ে নিচ্ছে শুল্ক আদায়ের ঢঙে
হয়তো রাতচরা পাখির সমগ্র ফিসফিস
ভেঙে পড়া সঙ্গীতের সিঁড়িতে ক্রমাগত হারাচ্ছে

তবু সমস্তটা এরকম মানানসই নয় আবহাওয়ার সঙ্গে
শুধু চোখের আওয়াজ আর দূর ট্রেনের বাঁশি ছাড়া

 

রমণকাহিনী

নাগরিকত্বের আদলে লেখা এই রমণকাহিনী
বস্তুত গ্রীষ্মের দুপুরে একলা দাঁড়িয়ে থাকা গাছ, পাতাহীন
অথবা পাতা তার উড়ে গেছে পাখির মতন, আকাশে

এখন গা বেয়ে তারই গন্ধ সহানুভূতিশীল একদম একা
একক পরভৃতের কনসার্ট —— যেন সব শান্ত, শুকনো
বহুদূরে চলে গেছে স্বপ্নের অ্যাফিডেভিট ছাড়িয়ে
শরীর থেকে জামাকাপড় খসে গেছে সরকারি পোর্টালে
নিজস্ব ক্যামেরায় দুহাত ছড়িয়ে বসে আছে সংশয়, মূর্ছনা
একেকটি আকরিকে যেমন নির্দিষ্ট ধাতুর সমাহার
দ্রুত সঞ্চালনে পা যেমন স্নিগ্ধ, বৈদূর্যময়
তেমনই স্যাক্সোফোন, ড্রাম, পিয়ানো, রমণ করছে গোটা শরীর
দেহমৌনগন্ধে ছেয়ে যাচ্ছে স্বর খুব অন্তরঙ্গ কাঁপনে
আদরের ক্যালপল মুখে নিজেরই উষ্ণতা
কাঁদছে নস্টালজিক কল্পনার চাবিখণ্ড খসে পড়ছে উঠোনে

আঁকা হবে হাতের স্পর্শশব্দ, গুনগুন শীত
হতাশার গিরিজনি রূপ, স্থির ও ধ্বনিকেন্দ্রিক প্রবাহগীতের রাত

 

পরাবাস্তবতা

আমার‌ই আঁকা একটি লাল ড্যাফোডিল
হলুদ খবরের ওপর দীর্ঘদিন ধরে দাঁড়িয়ে
তার‌ও ওপরে আছে বাতাস, নীচে স্বহস্ত স্বাক্ষর
অথচ, গত দশ তারিখ যে ছবিটা এঁকেছি
তাতে হাজার মাছের চেঁচামেচি পুঙ্খানুপুঙ্খ ধরা আছে
গেরিলা কায়দায় কয়েকটা সবুজ ভিটেমাটি
শূন্যস্থান পূরণ করবার মতো ছড়িয়ে দিয়েছি সেখানে
নাগরিকত্ব প্রমাণের দায়ে খুবলে খেয়েছি আণবিকতা
কেবল প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্ব আউড়ে
আমাদের যাবার কথা কোথায় আর তরবারি কোথায় রেখেছি
দ্রাক্ষাবৃত হৃদয়ের মতো দেখেছি অনুবর্তন জাগর হয়নি এখনও
বরং নোংরা ব্যথায় মানেমানে বিদায় নিয়েছে নিম্নচাপের শোক
ভেঙে গেছে আমাদের গাত্র দাহ্য হয়ে পাখিরা উবে গেছে
একত্র কাঁটাতারে কেঁপে উঠেছে একেকটি দুর্বিনীত ফড়িং
আর গেরিলা কায়দায় কয়েকটা সবুজ ভিটেমাটি
শূন্যস্থান পূরণ করবার মতো ছড়িয়ে দিয়েছি আমি
নাগরিকত্ব প্রমাণের দায়ে খুবলে খেয়েছি বৈকুণ্ঠধাম

এখন স্তাবকতার বাষ্পে পরিণত পাখিরা সব আসন্ন
প্রসবের নাড়ী নিয়ে একে একে অশ্ম হয়েছে আসলে
চৈত্র থেকে বৈশাখ, এখনই সময় পদ্মবীজ বপন করবার

ভালো লাগলে শেয়ার করুন
Avatar photo

By সৌরভ বর্ধন

নদিয়া জেলার শান্তিপুর নিবাসী এই তরুণ কবি মূলত ভাট কবিতার লেখক, তবে কবিতা বিষয়ক গদ্য‌ও লেখেন। প্রকাশিত মুক্তগদ্যের বই দুটি ----- 'কবির জখম ও অন্যান্য মিথ্যাচার' (২০২২) এবং 'কিছু আর্তনাদ কিছু আত্মনাশ' (২০২৪)। ২০২০ সালে প্রকাশিত হয় 'প্রসূতিকালীন পাঠ' কাব্যগ্রন্থটি। আর ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয় 'চিঁহিঁফেকশন' যা তার সাম্প্রতিকতম বিনির্মাণের লঘু চিৎকার

Leave a Reply