কস্তুরীগন্ধের যুবতীকে
১
কলকাতার বসন্ত আমাকে আর পোড়ায় না।
এত উঁচু ঘরবাড়ি, দিগন্তহীন
একটা রঙের বাক্সের দৈন্য নিয়ে আধোঘুম আকাশ
আর রাস্তায় খালি গলাবাজি
কিছুই পোড়ায় না।
অথচ মানুষ পুড়ে গেলে ছাই হয়
নাইকুন্ডলী খুঁজে বেড়ায় কারা যেন
হাতড়ে তুলে আনে দহন।
তোমার পাউডার কৌটো ভরে
আমার ছাই রেখে দেব ঠিক করেছি আমি,
আশ্চর্য এক বসন্তের বিকেলে সে মেখে তুমি
গোপন প্রেমিকের পুরুষ ছুঁয়ে
ভালোবাসার কথা বলে যেও স্থির বিশ্বাসে
আমি সেটুকু শুনব।
২
কী আশ্চর্য নিস্তব্ধতা আমাদের ভেতর
তোমার চুল সরিয়ে কাঁধে নির্মাণ করি,
ছুঁয়ে যাই গোপন আঁতাত।
ঘর ভরে ওঠে তীব্র বিষণ্ণতার অনুরাগে
তুমি জেগেছিলে নক্ষত্রহীন
অবেলায় এসে ক্ষমা চেয়ে গেছি বলে
তোমার চোখের বাষ্প ঠোঁট অবধি গেল না।
আমি তো ব্যর্থ প্রেমিক, সতত হাহাকার
অধিকারবোধ তুলে নিতে গিয়ে
বারবার খসে গেল তোমার উদভ্রান্ত যমুনায়।
ডুবে যেতে যেতে শেষবার
আমি সন্ধ্যাতারাহীন নির্লিপ্ত পথিক
কোমরের তিলটিকে মনে করে রাখি।
এ অভিশাপ আজীবন বয়ে বেড়াই যেন
এই শাস্তি প্রাপ্য রমণী। এ শাস্তিই প্রাপ্য।
৩
কারা যেন হেসে ওঠে আচমকাই।
আমার ভুলের খবর দাবানল হয়
ছুরিরাও ক্লান্ত বিঁধে বিঁধে
অবসর চায় শত্রুপক্ষীয় কলরোল।
চোখ জ্বালা করে ওঠে তোমার
এ বিরাগ তোমায় মানাচ্ছে না
তবু চোখ নামাচ্ছ না প্রখরা তুমি,
এইমাত্র সান্ত্বনায় আমিও এগোই
দিক ভুল হয়।
বারবার দিক ভুল হয়ে পুরাতন ক্ষত
স্মৃতিআলেখ্য, নামাজের মতো সত্য।
প্রগলভ হই।
ঝেড়ে ফেলি সলাজ ক্রন্দন
পাপ জড়ো করে দুর্গ বানাই একা
বশ্যতার কলঙ্ক আমার উপহার।
ছোঁবো না তোমাকে এজন্মে
শুধু দেখব জ্বলতে জ্বলতে একসময়
জল গড়িয়ে যাবে কতদূর
শুধু দেখব…
৪
যে বনে তোমার অধিষ্ঠান
তাতে বড় রঙ মাখা চপলতা
যেতে পারি না অনায়াস।
পা টেনে ধরে মিথ্যে গর্ব
যাতনা আমার পোষা বিড়াল।
ছায়ালোভী আমি তোমার থেকে
নিরাপদ দূরত্বে শ্বাস নিই।
আমার শ্যাওলার শরীরে উত্তাপ নেই
অভিযোগহীন আমি
ক্লান্তির ছুতোয় বনপথ থেকে দূরে সরি
চাতুরির মোহ ছাড়ে না আমায়।
কুটিলের লোভ যায় না।
কলঙ্কের ভাগীদার হয়ে বিস্মিত দেখি
নিষ্কলঙ্ক তুমি বিকেল রাঙাচ্ছ অলক্তরাগে।
৫
দেনাধার চুকিয়ে দিয়েছ বলে কি
এইমাত্র শেল বিঁধে মুক্ত হলে ?
নিজেকে চিনিনি বলে
তোমাকেও হেরে যেতে দিলাম দ্রুত
কিছু তো পাওনা ছিল ?
আহা আহত হলে ? বড়ো মধুর।
আমি যে রক্ততৃষ্ণায় ছটফট করি
তুমি কেন জল হয়ে পুষ্করিণী এগিয়ে দিলে ?