খুকু ভূঞ্যারর কবিতা

প্রতীকী ছবি

ঘরকন্না পেরিয়ে

দুটো পথ একটি সীমারেখা খুঁজতে খুঁজতে দিগ্বিদিক দিশাহীন
অতলে তলিয়ে যাওয়ার মুখে একদীপ আলো পেলে দেখা যেত
ইচ্ছের কোনো সঠিক ধারণা নেই
চুরমার দু’মুঠোয় ভরে মৃত্যুর ঠোঁটে চুমু খায়

কেন এত ভালো লাগে মেঘ?
সূর্যের ঘরকন্না পেরিয়ে বিষন্ন বাতাস, নিঝুম অন্ধকার?
আমার তো আলপথ ছিল
ছিল ফসলের দিন, ঘাসফুলের ঘ্রাণ
অবাধ্য নিজের কাছে আজ
বেপরোয়া অবুঝ ভীষণ
সে চোখে মৃত্যু সাজানো আছে জেনেও
মূর্তি গড়ে দুইবেলা পাষাণ অন্তরে—

আমরা অন্তত মায়ের কোলে ফিরে যাই

তুই চাইছিস সুদর্শন নেমে আসুক, আমিও
মরা ডালে পাখিটা বসতেই ভেঙে পড়ল ডাল
অথচ ডানার কেরামতিতে রক্তপাত ঘটল না একটুও
কিছুমাত্র আহত না হয়ে, মুখে নিয়ে স্বাধীনতার গান সে উড়ে গেল নিশ্চিন্তে

সময়ের গলা কেটে দিলে ধপ করে পড়বে মাটিতে
পা কেটে দিলে—
অথবা ভেঙে ফেললে মেরুদন্ড—
আমরা পতাকা হাতে নিয়ে মুছতে পারব কি ধর্ষনের দাগ? ঈশ্বরের অশ্রু—
শেষ করতে পারব কি কালবেলার ছায়া—

ওদিকে ভয়, এদিকে রক্ত, অশ্রু হাহাকারের বিকট গোঙানি
আয় আমরা অন্তত মায়ের কোলে ফিরে যাই
কৃষিকাজ ঘাম শ্রমের মাঝে একমুঠো ভালোবাসা নিয়ে বাঁচি ,এক আঁচল বিশুদ্ধ বাতাস—

 

ঘুম আসছে না

ঘুম আসছে না
আকাশে দলা দলা মেঘ
হাওয়া আছড়ে পড়ছে বাঁশের কবাটে
কিছুক্ষণ আগে বিজয় মিছিল বেরিয়ে গেল, পুকুর পাড় কলতলা ধরে উঠে গেল বড়ো রাস্তায়
পটকার আওয়াজে চমকে ওঠে ঘুমের শিশু

তুমি কি সত্যি এবার মোছাবে মানুষের চোখের জল হে উন্নয়ন
মানুষকে ভাত দেবে, নিরাপত্তার বিবিধ আয়োজন
দল বদলের অপরাধে যে যুবক থেঁতলে গেল
রক্তে ভিজে গেল রাস্ট্র দেশ
সত্যি কি পটে আঁকা যুগ আসছে এবার
রাগ দ্বেষ হিংসা ভুলে, ধর্ম ভেদাভেদ ভুলে
কোন্ সে মহামন্ত্রে মানুষ ছুটে আসে মানুষের কাছে
উজাড় করে দেয় ভালোবাসা
এমনি এক সমাজ গড়ো হে বদল ঈশ্বর

ঘুম আসছে না
দুশ্চিন্তার পাহাড় নিয়ে বুকে ভাবছি,গান দেবে তো ওহেে পাখির ঠোঁটে
গর্ভবতী জননী নতুন সময়ের দিকে তাকিয়ে—

ছাই জোসনায় লীন

আঁধারের ঘরকন্না করতে করতে একদিন আঁধারেই হারিয়ে যাব নিশ্চিত
সেইজন্য বোধহয় চাঁদের দিকে তাকাতে পারিনা
রোদের মাঠ পেরিয়ে কুয়াশার কোলে ঘুমিয়ে পড়ি
কোনো ফুল আমার জন্য ফোটে না
রেশমী চুলের মতো নরম বাতাস আমার জন্য নয়
চারপাশের যত সৌন্দর্য কোমলতা রঙ গন্ধ সুর গান, কিছুই আমার জন্য নয়
কেন কি, আমি কারুর একফোঁটা চোখের জল মোছাতে পারিনি
এগিয়ে দিইনি একথালা ভাত
ভালোবেসেছি শুধু দিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতা

ক্ষুধিতের অন্ন হলাম না
পীড়িতের সেবা হলাম না
নির্যাতিতার নিরাপত্তা হলাম না
মিথ্যে কলম দিয়ে শুধু , দুর দুর—
মরণও হয় না

রক্ত আমাকে ঘুম দিতে পারো
অনেক হত্যার আদর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ব
চোখ বেঁচে থাকলেই—
আগে মারো তাকে
তারপর আমার অস্তিত্ব মন অনুভূতি কল্পনা
চিৎকার করে বলছি—
আমি ঘুমোতে চাই—

হলকা হলকা বজ্র এনে দাও ওগো—
ছাই জোসনায় লীন হোক যত আক্ষেপ জীবন অক্ষর—

মুখোশের ক্ষত

এই চাঁদ দেখতে দেখতে কতদূর যাব—
দরজা বন্ধ
শোবার আগে কেউ হাঁক পাড়ে না, রাতের খাওয়া শেষ হলো—
অথবা ঘুমোতে গেলি—
ফোনে যতটুকু কথাবার্তা,আর দেখা হবে তো
দুটো ধানফুলের মতো মুখোমুখি
আঁচানো জলে জন্ম নেওয়া দূর্বাঘাস নিরুত্তর

মাকে কতদিন দেখিনি
ফোনের ওপার থেকে সাড়া পাই
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে
ঘুম খেয়ে গেছে রাত পেঁচা
মুখ ঢেকে মাঝে মাঝে বাবা দাঁড়ায় উঠোনে
হাতে দুধের বোতল
পা ছুঁয়ে মুখের দিকে তাকাই
মাটি হীন বৃক্ষ
লুপ্ত প্রজাতির মতো আস্তে আস্তে মুছে যাচ্ছে শিকড়ের প্রশ্বাস—

 

ছবি – যামিনী রায়

ভালো লাগলে শেয়ার করুন
Avatar photo

By খুকু ভূঞ্যা

জন্ম: ১৯৮৪ সাল ২২শে অক্টোবর। পিংলা থানার অন্তর্গত জলচক সংলগ্ন জঁহাট গ্ৰামে। পেশা: গৃহবধূ। প্রকাশিত গ্ৰন্থ লেপের আদর খোঁজে ফুটপাত(২০১৫ সাল) মাটিপাঠ (২০১৮) চন্দনে সাজিয়ে দাও কান্না(২০২২) ধুলোয় আঁকা অন্ন দুপুর(২০২২) নদী অথবা নাভিকথা(২০২২)

Leave a Reply