১১
কত কিছু দেখিয়েছো পথের দুপাশে …কত কী দেখাও
গাছ পাতা নিঃসঙ্গ প্রান্তর দিঘী নদী ও পুকুর
পুরোনো সড়ক বাড়ি ক্ষমতার প্রাসাদ মিনার
দেখাও নির্মম মাংস ঝুলে আছে দোকানে বাজারে
ফুলওয়ালী বিক্রি করে ফুল দূর্বা মালা
এত এত মানুষের কোলাহল চঞ্চলতা …ইতর উৎসব
আপাত স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ …ভোগের উদোম অবভাস
কেবল প্রচ্ছন্ন তুমি… তোমার তেজস্ক্রিয় শ্বাস
আমাকে পীড়ন করে …আভাস মিলেছে শুধু
অলদ্ধ তোমার পারায়ণ
১২
পড়ে গেছি পড়ে গেছি অথবা ফেলেছো তুমি পথে
তোমার নিজস্ব পথ তোমার সাজানো প্রলোভন
জখম ভীষণ পথপ্রান্তে পড়া নিঃসঙ্গ পাথর নুড়ি
আমাকে বিদ্রুপ করে যেন আমি ওদের মতন
তোমার তোমার থেকে দূরের উপলখণ্ড নিস্প্রাণ নিস্তেজ
জিগমিষা জমে আছে অথচ আহত অসহায়
বুকের ভেতর এক অনবস্থা চেতনাবিহীন নিষ্ঠ টান
সাধনা সহজ হলে তোমার একান্ত উন্মোচন
অতটা সহজ হলে উন্মীলিত প্রাণ… তোমার পরিধি
ভেঙে দিগম্বর বহির্লোকে ছড়াতো তোমায়
তাই তুমি আন্তরীণ নিভৃত নিগূঢ় অতিকায়?
১৩
যাবো না কোথাও আর বসে থেকে পথের কিনারে
দেখবো তোমার গাছ পাতা ঝরা নীরব শিল্পের তুলিটান
পৃথিবীতে এত পাতা ঝরে… যুগ যুগ ধরে ঝরে যায়
মানুষ পতঙ্গ কীট কেউ আর অটুট থাকে না
মাটির উপর ঝরে যেন বা মাটির কোলে মায়ের মতন
কত মেঘ ভেসে গেল… ভেসে যায়… আকাশে… জীবনে
জীবনের ভেতরে… গভীরে… কত মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে
কোথাও যাবো না আমি… কেন যাবো
তোমার বৃষ্টিতে ভিজে আমি তো তোমায় মেখে আছি
১৪
এই পথ এই পাগলামি এই ধুলোয় ধুলোয় মেশা
ধুলোর জীবন এই ক্লান্তি এই শ্রম সকল জখম
কেবল তোমার কাছে তোমার সুদূর আভা তাপ
শরীরে জড়াবো বলে হৃদয়ে গভীরে
কত শীত কেটে যায় কত গ্রীষ্ম হেমন্ত শরৎ
প্রত্যন্ত প্রান্তরে একা পরিজনহীন দিশাহারা
যাদের রয়েছে কাছে তারাও কি একা নয়
ঘরের ভেতর তারা প্রান্তরে রয়েছে আর
আমার ভেতর যেন প্রত্যন্ত প্রান্তর ঢুকে আছে
সেখানে কোথাও তুমি রয়েছ অথবা তুমি নেই
শুধু… তোমার থাকার বোধ রয়েছে ধুলোয়
১৫
দেখেছি তাণ্ডব আমি তোমার বিষম রূপ ভয়াল ভীষণ
উড়েছে টালির চাল টিনের খড়ের
ভেঙেছে অঢেল বাড়ি কত গাছ ডাল
ভেঙে যায়… অক্ষত থাকে না কিছু …একদিন… সব
অনেক অনেক বাড়ি…ভেতরে ভেতরে…অনেক জীবন
আমিও ভেঙেছি মনে …হৃদয়ে …গভীরে
পার্থিব জীবন শুধু ভাঙা আর ভাঙা আর
কেবল ভাঙণ ক্ষত …অদৃশ্য …অদ্ভুত
তোমার পথেও এত ভাঙাচোরা এত হাহাকার