মেঘ বৃষ্টির রূপকথা

নীল আকাশটা নদীর আয়নায় মুখ দেখবে বলে যেইনা একটু ঝুঁকে এসেছে অমনি কোথা থেকে একদল মেঘ হাওয়ার মতো ঘোড়ায় চেপে এসে হাজির।
কি তাদের হাঁক ডাক ! কি তাদের জাঁকজমক! হৈ হৈ রৈ রৈ করে তারা ছুট্টে এসে আকাশকে ঘিরে ধরল। গায়ে তাদের ছাই রঙা উড়নি।মাথার কৃষ্ণকালো চুল চুড়া করে বাঁধা। এমন ডাকাতে মেঘের দল কে অমন ছুটে আসতে দেখে আকাশ তো ভারি অবাক।
“কি চাই বাপু তোমাদের?
একটু নদীর আরশি তে যে মুখখানা দেখব তারও জো নেই!”
আকাশের কথা শুনে মেঘের দল হা হা করে এমন অট্টহাস্য করে এ ওর গায়ে ঢলে পড়লো যে আকাশ চমকে উঠে হাতের সোনার কাঁকই খানা ফেলে দিলে নদীর জলে। আর অমনি সেই সোনার কাঁকই এর সোনা রং ছিটকে এসে লাগলো দিগন্তে। ঠিক যেখানে আকাশ আর আমাদের মাটির পৃথিবী মিলেমিশে গেছে সেইখানে। সেই সোনারং ছিটকে পড়ে ছড়িয়ে গেল সারা আকাশ জুড়ে।ডাকাতে মেঘের দল তো এসেছে সেই সোনার কাঁকই খানার লোভেই ৷ অমনি তারা হাওয়ার লাগাম কষে ধরে ধেয়ে গেল দিগন্তে ৷ ঘোডার খুরে খুরে ঝিলিক দিয়ে উঠল বিদ্যুৎ। মেঘের দল চেঁচীয়ে উঠল হারেরেরেরে… যেন গর্জে উঠল বজ্র ৷

আরও পড়ুন রূপকের ‘বায়স্কোপ’

এদিকে সোনার কাঁকই হারিয়ে আকাশের মুখ ভার ৷ তার বড় বড় নীল চোখে জল ভরে এল ৷ টুপটাপ করে সেই জল ঝরে পড়ল নদীর বুকে ৷ আকাশের চোখে জল দেখে আমাদের তিরতিরে পাহাড়ী নদীটিরও ভারি দুঃখ হলো ৷ সে মেঘের দলকে ডেকে বললো “আমার যে সোনারঙা জলটুকু আছে সব তোমাদের দিলাম, শুধু আকাশ কে আমার বুক থেকে কেড়ে নিওনা। “তারা বললে “তবে সোনার কাঁকই খানা আমাদের দাও।”
“কেমন করে দেব? সে তো আমার বুকে জলতরঙ্গ বাজানো নুড়ি পাথরে লেগে গুঁডিয়ে গেছে সেই তখনই ৷ দেখছো না দিগন্তে তার রঙ লেগে আছে। পারোতো সেই সোনামাখা রঙ তোমাদের গায়ের উড়নিতে মেখে নাও ৷”

এইনা শুনে মেঘের দল তো হারেরেরেরেরে করে তাদের ছাইরঙা উড়নি উড়িয়ে, চুডা বাঁধা চুল এক দমকায় ছড়িয়ে দিয়ে ধেয়ে চলল দিগন্ত থেকে দিগন্তে। নীল আকাশের আসমানি রং ঢাকা পড়ে গেল সেই ভ্রমরকালো মেঘের নীচে। মনের দুঃখে তার বড় বড় চোখের জল অঝোর ধারায় ঝরে পড়তে লাগলো তিরতিরে নদীটির বুকে। টাপুর টুপুর টাপুর টুপুর করে বেজে উঠল জলতরঙ্গ। আহা ! নদীর বুকে আকাশের চোখের জল ভালবেসে মিশে গেল, মিলিয়ে গেল! আর আমাদের সেই ছিপছিপে ছোট্ট নদীটি ভরাট হয়ে উঠে আকুল বেগে ছুটল সাগরের উদ্দেশে। এমনি করেই গড়ে উঠল আকাশ নদী সাগর আর মেঘেদের রূপকথা।

আরও পড়ুন রক্তিম ভট্টাচার্যের ‘বিষমবাহু ত্রিভুজঃ ত্রিকোণ পরিসীমায় বহুমাত্রিক বৃত্তায়ন’

ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply