সৌমাল্য গরাইয়ের তিনটি কবিতা

মীনকেতন

যাও দ্রুতগামী মীন। জল যেরকম যায়
পুচ্ছবীণায়, রেখো হে বেগম আলাজ্বিন
নেভানো আগুন আজ গুণগুণিয়ে এসেছে
ধোঁয়াকে ধরিতে চায় পুড়ে যাওয়া ছাই
করকমলালেবুর পেলব খেয়াল থেকে
উঠে এসে বসেছে সুরামাছি,
কী রোগ ছড়াবে ছড়াও, পেতেছি আসন

স্বগত কার্বন কপি, যতদূরেই সরাও
হেলানো মুখের পাশে তোমার ত্রিকোণমিতি
দেখেছি বিকল জাহাজের সফেদ ডানায়
স্যাঁতসেঁতে আর্তস্বাদ ছুঁয়ে আছে নাভিধূপ
তার- ই গন্ধ পেয়ে আমিও এসেছি
তোমার প্রতিটি কোষে নিখুঁত যাতনা হয়ে

 

গরমিল

ঠিকমতো বলা যায় না সব কথা
কথার ভিতর অনেকরকম মন
পরস্পর জড়িয়ে যায়
সীমান্তের ওপারে তখন মৃদু আঁধারের শিবিকা
ঘুমের পৃথিবী ভেঙে যে যায়, তার আয়তন
ধরে রাখতে পারে না কোনও বস্তুজগৎ

স্লেট থেকে চলে যাওয়া জলপোকা
হাজার বছর সুপ্ত থাকা জীবাশ্ম দাগ
ছিঁড়ে যাওয়া ম্যাপ থেকে অন্তরীক্ষে
হিসেব মেলাতে অক্ষম চিরকালের খোদা
যেন সকলেই মৃত গ্রহের বুকে জমে থাকা জল
তেমনি অন্তরীণ আমার বামদিক ও ডানদিক
অনেক বৃষ্টির পর তুমি তার কান্নার সমান

 

কিসসা- কাহিনী

পাতা ওল্টালেই কিসসা বদলে যায়, বিশ্বাসের নার্ভগুচ্ছ কাঁপতে শুরু করে। ডোবার পাড়ে ফোটা সন্ধ্যামালতী ও হরেককিসিমের জবা ফুল মন ঝরাবার জন্য ডাকতে থাকে। জানালার খামে ঠিকানা রেখে যায় মূককীট, কথা হারিয়ে ফেলা শব্দকবুতর নির্জন প্রস্রাবে ভরিয়ে দেয় ডানা।

পর্বতের ফাটলে, গাছের নির্মোচনে, কিংবা ভাসিয়ে দেওয়া দুটো কাগজের নৌকায়
হরেক রকম কিসসা কাহিনি উড়ে বেড়ায় আসমানে। তাদের মধ্যে একই কিসসা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে নতুন কিসসার আমদানি করে। কিন্তু
এক থুত্থুরে ডানাওয়ালা বুড়ো এসে কিসসাগুলো উলটে পালটে দেয়
সেগুলো ভাসতে ভাসতে মৃগনাভির গন্ধ ছড়িয়ে হারিয়ে যায়। সংসারের ঘটিতে বাটিতে ঠোকাঠুকি লাগে। আমরা অপণা মাংসে হরিণা বৈরীর দল হাতড়ে হাতড়ে সেই হারানো কিসসাগুলো সারাজীবন বোকার মতো খুঁজতে থাকি..

 

ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply