গৃহবধূ
এখন আমার অঢেল সময়
দিনের প্রতিটি পর্যায়
প্রতিবেশী গাছেদের
মাথায় হারিয়ে যায়, দেখি
আমি গৃহবধূ
জীবনে আমার ভূমিকা পরিশিষ্টের মত
এই ধরো আজ কিছু ভাবলাম
সুশ্রী কিছু,
উপচে পড়া পানীয় নয়
মায়ের পলকহীন চোখের মত
যেভাবে একদিন স্থির হয়ে যাব—
“অসতো মা সদগময়
তমসো মা…”
প্রকাশ্য দিবালোকে আবৃত্তি করে আদিপুরুষ
অন্দর থেকে শব্দ আসে,
গন্ধ আসে, সাথে
বাসনের টুং টাং
কড়াইয়ে ঘৃতাহুতি
স্বাহা! স্বাহা! স্বাহা!
হে আচার্য
কত একতার সংজ্ঞা বদলে যেতে
দেখেছি এই রাসায়নিক শহরে
চাঁদ নিয়ে পদ্য লেখার সময়
খোকারা মোমো খায়
তুলকালাম যুক্তিতে উড়ে যায় ঘুম–
কিছু উন্মাদনার পর আবার
সবাই ঝিমিয়ে যায়
দলে দলে ওরা পার হয় মিছিল কেটে
হাতে হাত, চোখ লাল
হে আচার্য, ওই দ্যাখো
সুরার বোতলে ভেসে যায় চর্যাপদ,
তোমার দীর্ঘ সাধনার রবীন্দ্রনাথ!
মনে হয়, বেঁচে আছি
ঝিঁঝিঁ পোকারা চুপ হয়ে গেলে
কিছু চিল আর শকুন চিৎকার করে গেলে
মনে হয়, বেঁচে আছি–
এখন অল্প আলো লাগে হেঁটে যাবো বলে
মানুষের জন্য রেখে যাবো চেতনা
রেখে যাবো চাঁদের পাহাড়,
আমি ধীরে ধীরে সেই পাহাড় চূড়ায় উঠে দেখবো
প্রতারিত লিঙ্গ কীভাবে বিকল হয়ে গেছে
কীভাবে স্বতন্ত্র মূত্রাঞ্চল গঠিত করার আগেই
কচু কাটা পড়েছে কবিতা
ভোরের আলোর পাশাপাশি তবু হেঁটে যেতে হবে
রাজধানী শহরের স্বঘোষিত শ্মশান নিয়ে
যাঁরা কল্প কবিতা লিখে ফেলেছেন
সেসব পুড়িয়ে ছাই করে দিতে গিয়ে
চ্যালাকাঠের আদলে ভাস্কর্য নির্মাণ করে
ভালোবাসা গুছিয়ে যাবো…
ক্ষুধার পরবর্তী কবিতা কীরকম
গল্পগুলো বিশপের
খাটে শুয়ে আরাম করে
দুঃখিত হয়ে শাসন করতে গিয়ে দেখি
কবি উন্মাদের মতো লিখছেন তাঁর অন্তিম লাইন
‘ক্ষুধার পরবর্তী কবিতা আসলে কীরকম’
দুর্দান্ত চিন্তারা নিংড়ে প্রসব করছে ঘাম
বুকফাটা আর্তনাদ
শ্যাওলার মত উঁকি দেওয়া
জন্মগত ভয়
আর কিছু নেই…কিছু নেই
ছিল না কোনদিন
স্বপ্নের গাছেরা
জল খুঁজে পায় না
ওরা উঠে আসছে একে একে
জানালা বেয়ে
শিরার মতো ঢুকে পড়েছে
বুকের ভেতরে
দেবী
একেকদিন জানালা গলে উপচে ওঠে ক্লান্তি
দুপুর গোলাপী
দু’দণ্ড শোবার জন্য
ইতস্ততঃ করে যে পৃথিবী
স্মৃতিরা তাতে মানুষের মত হাঁটে
নিজেকে অপরাধী মনে হয়
শৃগালের মত দ্বৈত মনে যাকে ভালবেসেছ
সে তো গৃহ-দেবতা নয়!
ফুল তুলসী ফুরিয়ে গেলেও
তোমার ভক্তি ফুরোতে দেখি না
তুমি একটি অদৃশ্য উপমা, হে দেবী
স্বপ্ন ফুরিয়ে গেলে অপরাধ নিও না
রক্ত লেগে গেল
ওইখানে আমাদের ঘর ছিল
ছবির মত জল আর সূর্যমুখীর নির্ভীক গন্ধ
ফিরে ফিরে আসত বাতাসের ভেতর ।
এই যে আমি একা
পুরোনো কোনও ছাগলছানার মত
ঝুপঝাপ শব্দে জল নড়ে ওঠে
কেউ যেন বলে যায়
ফিসফিসিয়ে রঙিন কথা
চারিদিকে সানাইয়ের সাদা ফুল,
ভুতুড়ে কান্না আর পায়রা রঙের দিনে
যেন হঠাৎ একটু রক্ত লেগে গেল
নদীর মুখে রক্ত উঠে এল ।
সেই ইতিহাস যার ডিম হারিয়ে গেছে
শীত নামছে ধীরে ধীরে
শীত…শীত…
শিব ধ্বনির মত কুয়াশায় কালী হতে হতে
এইমাত্র বের হলাম আমি মন্দির থেকে
প্রহরীর মত কিছু লোক আমাকে খুবলে নিচ্ছে
‘আপনারাই কি পুরাণের নন্দী ভৃঙ্গী?’
এভাবে বলায় কে যেন তীব্র সূঁচ ফুটিয়ে দিল কোমরে
জ্ঞানী মানুষেরা বলছে ‘অ্যানেস্থেসিয়া’
তবু কেন কঁকিয়ে উঠছি,
যোনি বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে ইতিহাস–
সেই ইতিহাস যার ডিম হারিয়ে গেছে
স্মিত শিশুটি অজান্তে এসেছে বাড়ির ঠিকানায়
বিজ্ঞানের ভাষায় এভাবে লেখে না কেউ
আমার জন্ম ইতিহাস !