সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া তিলোত্তমার সঙ্গে যে বিচ্ছিরি নৃশংস অত্যাচার হয়েছে তা আমায় প্রচন্ড ভাবায়। এই ধারাবাহিকতা ৭৮ বছর ধরে হয়ে চলেছে। যে থানাগুলো পশ্চিমবঙ্গে আছে তা খোঁজ করলে বা সমীক্ষা করলে জানা যাবে, প্রতি থানায় কোনো না কোনো সময় তারা কেস ফাইল করেননি। ধর্ষণের পরে বা আগে কোনো সহযোগিতা করেনি।
প্রতি জেলায় মহকুমা কোর্টে খোঁজ করলে এ ও জানা যাবে, কত বাবা মা ভাই বোন তাদের প্রিয়জনের বিচার পাওয়ার জন্য দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে…
প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মী বা সমর্থক তারা শাসককে নাস্তানাবুদ করছে আর ভাবছে তাদের বিশেষ ঐ রাজনৈতিক দল ধোওয়া তুলসীপাতা ছিল। আসলে তারাও ধর্ষক প্রমাণের আগে পূজিত হতো। আসলে সময়টা এমন, সকলেই অন্যের বিচার করে।
নিজেও যে ভীষণ ঢ্যামনা , তারা খুব সযত্নে লুকিয়ে রেখেছে।
ছোটবেলায় একটা প্রবাদ খুব শুনতাম, চুরি করে ধরা পরলে চোর নাহলে সাধু।
এই ২০২৪ এসে সারা কলকাতা… পশ্চিমবঙ্গ… সমগ্র পৃথিবীর ভদ্র মানুষ পথে নেমেছেন। স্লোগান তুলেছেন। আকাশে হাত ছুঁড়ে জানান দিচ্ছে এই বর্বরোচিত ঘটনা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। ফাঁসি দিলেই তারা খুশি নয়, এর পেছনে যাদের মদত আছে খোলসা করতে হবে। যে সিবিআই আমাদের কুমিরের গল্প শোনায়, শেষে কুমির আর ফুরোয় না। তেমনটা হবে না তো?
আসলে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে এই মনন এই পুরুষতান্ত্রিক ভাবনায় কারা সকালে উঠে জল দেয়? কারা দুপুর রাতে ভাত বেড়ে দিয়ে বলে, আর একটু মাংস দেব? তাদের তখন জিভ খুব লক লক করে কামনা বাসনায়? কারা আর তর্ক করতে না পারলে খিস্তিখেউড় করে? সেই সব মানুষকেও চিহ্নিত করার সময় এসেছে! যারা বিবাহের নামে শরীরে সম্পদে আত্মসম্মানে হাত বসায় তারাও কি মানুষ ? নাকি বেশ আড়ম্বর করেই চলছে সবকিছু। পুরুষ একটু এরকম হয়, এইভেবেই। এটুকুও মনে রাখা দরকার প্রতি দিনে-রাতে নারীর মত পুরুষও কখনো ধর্ষিত হয়, বলতে পারে না হয়তো।
আজ যখন সরকারের পিঠ ঠেকে গেছে দেওয়ালে, মাথা নষ্ট করে করে আরও নতুন নতুন বুদ্ধি বের করে এই পুরো ব্যাপারটা ঢাকতে চেষ্টা করার জন্য। এই ৭৮ বছর ধরে তোমরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিতে গেছ। আর তো জিততে পারবেনা! গ্রামে গঞ্জে মফস্বলে এখনো কত ধর্ষণ হয় প্রতি ৫৪ মিনিটে তার কি কোনো খোঁজ রাখো? যেখানে পুলিশ কখনোই নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করেননি। শুধুই বলে এসেছে, হুঙ্কার দিয়েছে ‘জানিস পুলিশ কি জিনিস?’ এই পুলিশ কে দেখলেই মনে হয় এরা ভয় ও ত্রাস তৈরী করে। ভালো ব্যাবহার করতেই শেখেনি। ভালো মানুষ সেজে এখনো যারা ঘুরে বেড়ায়, লুকিয়ে লুকিয়ে অন্ধকার গলিতে লালা ফেলে তাদের দেখলে ঘৃণা লাগে।
কবি শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
পলাশকুসুম
সারা বন ভরে গেছে তীব্র শিখা বর্ণে’র অনলে
মধ্যাহ্ন পথের পাশে সমাহিত যন্ত্রণায় জ্বলে
যেন কার অনির্বাণ চিতা!
ধু-ধু অগ্নিপরীক্ষায় নামে বুঝি চিরন্তনী সীতা?
প্রান্তরে বাতাস কাঁদে, বনান্তরে কেঁদে ওঠে অলি-
গেল গেল ভস্মীভূত হয়ে গেল সোনার পুত্তলী!
হে আকাশ বৃষ্টিধারা দাও,
সোনা-অঙ্গ বর্ষণের জলে আর মেঘেতে জুড়াও!
মৌন জ্বালা বুকে নিয়ে জ্বলে দেখো আশ্চর্য দুখিনী
মৃত্তিকার কন্যা, ওকে বেদনার বৃন্তে আমি চিনি!
অথবা সে-সম্ভ্রমের অপমানে রক্তে ধুয়ে লাল
পাঞ্চালির বেণী বাঁধে ওই কোন প্রতিজ্ঞা ভয়াল!
শব্দহীন অট্টহাসি হেসে
কে যেন বাতাসে ঘোরে কৌরবের ছায়ার উদ্দেশে!
নেপথ্যে মাটির নিচে চিরন্তন আরো কেউ বলে-
তোমাকে পবিত্র করি রক্ত আর দুঃখের অনলে।