গলা থই থই জল মেখে মাঠঘাট বসে আছে। আকাশে অযুত নীল, উড়োঝুরো নীলের মেলাধুলো। এ ধুলো মাখাবে কাকে? গায়ে মাখবেন শ্রীমতী? জানা নেই। তবু এই পালাগান তোমাকে শোনাতে মন চায়। এখনো মোছনি সেই কপালের জ্বর? গত ভাদ্রের উথাল বৃষ্টি বন‍্যা; মুঠো ছিনিয়ে ভিটেটা কোথায় ভেসে গেল, আর ফিরে এল না কোনোদিন। তারপর কখন বছর, মাস, কথা দেওয়া শ্রাবণের ডিঙা, ভেসে গেল একে একে সব। দেশ ভেসে গেল, সামনে কাঁটাতার, মাঝখানে শুধু পালাগান থেকে গেল। তুমি ও কি সেই মাটির দাওয়ার মতোন, ভেসে গেলে ঐ ভাদ্রের ধারে? এ পাড়ে নদীর আকাশ কেমন জানি। সবাই বলে কিছুটা দূরেই বাস গড়ে নিমাই। কণ্ঠির হার কতবার জলে ভেসে যায়, আবার তবু, ঐ জল থেকে সেই পালা তুলে আনি। তোমাকে খুঁজতে বেরোই, জলে ডোবা ধবধবে দেশে। আজকে আকাশে ঠিকরে পড়ছে আধখানা চাঁদ। জল ভেজা নিমাই এর শ্রীঅঙ্গে ঝরে পড়ছে, ‘হা কৃষ্ণ’ বিভীষিকা। সব সবকিছু কি আজকের, এই রাতে, নেমে আসে? নিমাই এর গা ভরে তখনো শ্রীমতীর জ্বর। যেমন জ্বর হারানো বর্ষায় তোমার গায়ে নামত। বলো না, দেশটা নয় ভেসেই গেল, সাথে কি তুমিও ভেসে গেলে, রাধার গায়ের জ্বরে? রাত ঘনিয়ে আসে আরো। চাঁদের ছায়ায় কখন নিমাই ভেসে পড়ে, কানু বুঝি এই গলা জল? রাত চিঁড়ে ভোর হয়। জলে ভাসা পদ্ম গায়ে, নিমাই কৃষ্ণ পেয়ে যায়। তবু আমি বুঝি তোমায় আর পাই না। শুনছি আসছে মাসে নতুন নৌকা ভাসবে গাঙে। পালাগানটাই তোমায় কেবল শোনানো হল না।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন
Avatar photo

By সঞ্চারী দীর্ঘাঙ্গী

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ থেকে স্নাতক হয়েছেন, এখন চলচ্চিত্রবিদ‍্যায় স্নাতকোত্তর করছেন। অ্যাকাডেমিক নিবন্ধ লেখার পাশাপাশি কবিতা, গদ‍্য আর পেইন্টিং এ নতুন ভাষা খোঁজার চেষ্টা করছেন।

Leave a Reply