রবিবারের আলাপ সালাপ : পর্ব – ০৭

কোনোদিন কি ভেবেছি, কোথাও যেতে পারবো না। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হবে। এমনটা তো স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কেউ ভাবেনি। সমস্তকিছু কেমন থেমে আছে।
সমস্ত স্তরের মানুষকে এক নিয়মে বাঁধা যাবে। এমনটা তো ভাবিনি। রোজকার কাজের জীবনে যখন হাঁফিয়ে উঠতাম, আর মনে-মনে ভাবতাম এক সপ্তাহ ছুটি পেলে একটু বাড়ির আপনজনের সঙ্গে কাটানো যাবে। আর এখন যখন আর ভালো লাগেনি, ভাবি কোনো কিছুই বেশি বেশি ভালো নয়। এতো এতো ঘুম ছিল আমার শরীরে, প্রায় বারো ঘন্টা ঘুমোচ্ছি। তবু তো গ্রামের বাড়ি, গাছ বসাচ্ছি। পাখি দেখছি। মায়ের সঙ্গে গল্প করছি। কিন্তু শহরের মানুষ, তাঁরা ভালো আছে তো? আছে নিশ্চয়ই কোনো একরকম ভাবে। ফেসবুকে যে এক দেশ আছে, সেই দেশের মানুষ কত অবলীলায় কতকিছু বলে। সেইসব লেখা পড়ি – ভাবি, এর বাইরেও কত মানুষ। তাদের আমরা মনেই রাখি না। দূর বোম্বে রোডের ধারে তাঁদের বাস।দেখতাম তাঁরা কাজ করছে কিন্তু তেমন ভাবে সবকিছু পায়না। আর আজ এই এক ভয়ানক সময়ে তাঁরা কেমন আছে? ভাবলে কেমন থম মেরে যাই। দৃষ্টি নির্লিপ্ত হয়ে যায়। শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে।
ঠিক এইসময় গত বছর যখন হাওড়া স্টেশনে নেমে বাস ধরতাম, ঘামে ভিজে যেতাম কষ্ট হতো, এখন মনে হয় সেই কষ্ট অনেক ভালো। সমস্ত কিছু আগের মতো হয়ে যাক। আর কিছু ভালো লাগছে না। ভিতর থেকে কেমন হাহাকার অনুভব করি। যখন রামরাজাতলায় কাজ করে নয় বছর প্রাপ্তি হিসাবে আর্থারাইটিস বলে একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। ডাক্তারবাবু যখন বলে, সকলে ছেড়ে চলে যাবে এই বন্ধুটি তোমাকে ছেড়ে যাবে না। দুঃখের মধ্যে ভীষণ খুশি হয়েছি। একজন তো আছে । রাতের পর রাত এই আর্থারাইটিসের তীব্র ভালোবাসায় এখনকার মতো এতটা বান্ধবহীন মনে হয়নি। আর আজ প্রায় পৃথিবীর যখন জটিল অসুখ কি বিচ্ছিরি বড্ড একা লাগছে।
যখন লিখতে পারতাম না, যা কিছু নিজেকে ভুলিয়ে রাখার। তখন কোনো আপনজন জিজ্ঞেস করলে বলতাম সময় কোথায়! আর আজ অফুরন্ত সময়, লিখতে ভালোই লাগছে না।
বাড়ির বাইরে বিজলির আওয়াজ, বৃষ্টি নামলো। এও যখন মনে করি ছোটো বেলায়, অভিজ্ঞতায় তেমন ভালো কিছু নেই। বর্ষা শুনলেই ভয় করে। তার থেকেও যে এতো ভয় যে নিয়ে আসবে আজকের সময়। তাও কোনোদিন ভাবিনি। দুটো খাওয়ার জন্য মানুষের কত লড়াই, সেটাও থেমে আছে। বাইরে বেরোনো বারণ। আপনারা সকলে ভালো থাকুন, যদি না বেরোলে আবার সকল আগের মতো হয়ে যায় সেই অপেক্ষায় দিন গুনি।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে নয়, সকলের ভালোর জন্য কিছুদিন ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হবে আমাদের। আবার আগের মতো হয়ে যাওয়ার আশায়। আবার ট্রেন চলবে বাস চলবে। সেই দূর কাকু ঘুরে ঘুরে ঘটিগরম বিক্রি করবে।

১১ এপ্রিল, ২০২০

ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply