তুমি ডাক দিয়েছ
২৮১ নম্বর পথ থেকে ফিরে আসি কাপাসের মতো…
পূর্বজন্মে
শিবপুর বাগিচায়
মিঞাঘাসে হারাইয়াছিলাম দুইজনে। মনে পড়ে? পড়ে মনে, দু’জনেই ভাঙিয়াছিলাম!
… হাওয়া স্তিমিত এখন রাজশাহী অভিমুখে। অঙ্গনাক্যাফের ভিতর এত কাছে বসেছিলে, তবু পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে কেন আমায় গুলি করলে না, বলো! ভোরবেলার রাশি রাশি ট্রাক রাশি রাশি লরি অবরোধ ক’রে সূর্যতামসীর মতো পড়ে আছে মৌনমুখর শিউলি। তুমি বলো, ওদের তোমাকে প্রয়োজন। ওদের কথা ভাবি। শিউলির বিজ্ঞানসম্মত নাম, শ্রাবণ পেরিয়ে অটাম… হাংরি অটামের বোধিপ্রাপ্ত নাম মনে করার চেষ্টা করি। মনে মনে ভাবি, মুখোমুখি সমস্ত সম্বোধনেই ‘আপনি’র রাজপাঠ যদি, তবে হাতে কলম ধরিয়ে দিলেই কেন কেবল ‘তুমি’ বেরিয়ে আসে!
তুমি তো প্রচ্ছন্ন বাঁধ। তোমার কাছে গাইতে আসে ভ্রমরকন্ঠী একতারা দুইল্যা বুড়ো। বৎসরকাল জমা করি প্রস্ফুটন শিখতে চেয়ে তাই। সকল অভিজল ফিরে ফিরে আসে অলীক নক্ষত্রের চোখে। একক সঙ্গীতে আমি এখনও তেমন পটু নই তবু মনস্থ রয়েছে, অই শ্রীমতিকে যা পারি শোনাব আমার কৃষ্ণপ্রিয় তরু-বয়সের কথা। জানো, এ সকল গঠিত নয়নের উদ্দেশবিন্দু প্রধানত তুমি। সীমান্তবর্তী সখা কতদিন শহরের সমীপবর্তী নয়। আমিও প্রকৃত নই একাধিক রাত্রি ও অসুখের যোগভ্রষ্ট প্রিয় অধিবাসী। সমস্তই জানি কোথায় নিম্নস্থল, কোথায় বিচ্ছেদবিলাস। তবু কেন তড়িতাহত হতে চেয়ে বারেবারে বদলে ফেলি পশম! কেন কাছিম অপরাধে তৃপ্তি দিতে চেয়ে শিশুমৃত্যু শব্দ ভুলে যাই! কেন অচেনা মণিতে জেগে থাকে ইস্পাতের উপর নুয়ে পড়া ফুল…
বালকের
অভিমান নাই,
বালক, ব্যাধের বাঁশি
তুমি শুনিয়াছ হিম? মাংসের বন্দুক শুনিয়াছ?
… গুলি চলে। সশব্দে পাখি উড়ে যায়। পাতা কাঁপে। যে আমি সেপাই, স্থির জানি, ওই হিম ব্যক্তিগত নয়। মায়ামুক্তিলাভে তৎপর অতিক্রম যত, তত বেশি অপক্ষয়, বিপরিণাম, পূর্ণ ব্রহ্মশাপ! আজ মনুষ্যেতর আমি তোমার পায়ে পায়ে ঘুরি। ঘর পেরিয়ে বাধ্য করি হলুদচূড়ার কাছে যেতে। তুমি জানবে না ভাস্কর, কেমন চাকর আমি তোমার।
উঁচু হই
ঘাড়
উঁচু ক’রে দেখি
আশ্চর্য চোখ। গ্রহাণু যেন!
আকাশচারীরা কেন এত ঠান্ডা
ঠোঁট চিবুক ঢাকা পোশাক পরে, আমি বুঝি।
দিগন্তে
পাথর শুধু
কালো পাথর
… আর্মেনিয়ান ঘাটের ও’পাথরে, একপাল মেষ লইয়া মুগ্ধশ্বাস ফেলিতেছিল বালক। কুশগ্রহণের অন্তিমে তার মৌনতার অধিষ্ঠান।
বালকের মৌনতায় ছেনি হাতুড়ির ঘা দিতে দিতে ভাস্কর, তোমার মাথা আরও আরও উঠে যায় আকাশে। পাখি জানে, মৌনী মেষপালক ও ভাস্কর বন্ধু হবে না কোনোদিন। আমি হবো। আমি। এই যে আমার এতখানি ঋণ…
নিশাচর,
ভোর হতে না হতেই ঘুমিয়ে পড়েছ!
স্নায়ুসিক্ত রোগী তুমি, জানি। কাপাস-সিক্ত কন্যে। সকালের ঘাসফুল, তোমাকে সারাদিন প্রকৃত গুণফুলের কাছে হেরে যেতে বাধ্য করে কেন যে! বাঁশি বাজে না গোপালভোগের আগে। ঋণগ্রস্ত তাই।
পাকশালা অন্তরে। তবু ভুল ক’রে কেন তুমি হলুদচূড়া দ্যাখো? বুকের বীজ ফাটিয়ে দ্যাখো হলুদ খরগোশ, কবি-সর্বনাশ!
শিশুতীর্থ জাগলারে আমি শীতলষষ্ঠী খাই আজ। বাস্তুহীন তোমাকে বলি, খেয়েছ তো চুয়া? এখন তুষার না খেলে, ঐ ধূমাবতী আর এই ধূম্রলোচন সারাদিন জাগর থাকবে, জাগর!
খাও চুয়া। ঘুমাও। হায়-প্রেমিক ঘুমোতে না পারলে,
হায়-ভূত ঘুমোবে?
ছবি – লেখক