কালিকাপাতাড়ি হাওড়া জেলার একটি নিজস্ব লোকনাট্য। পুরুলিয়ার ছৌ-নৃত্যের সঙ্গে এর কিছুটা মিল আছে। তবে ছৌনৃত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য যে মুখোশ তা কালিকাপাতাড়িতে নেই। কালিকাপাতাড়ি লোকনৃত্য না কি লোকনাট্য এ নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। তবে এই নৃত্যের প্রধান লক্ষণ যে কথা না বলে বাদ্যের সঙ্গে অঙ্গভঙ্গিমাতে বক্তব্য উপস্থিত করা, সে-হিসেবে কালিকাপাতাড়ি নৃত্যই। আর এতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরাও এটাকে নাচ-ই বলে থাকেন। তা সত্ত্বেও সামগ্রিক উপস্থাপনার প্রেক্ষিতে লোকনাট্য বলাই সমীচীন হবে।
কালিকাপাতাড়ি নামের অর্থ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে যে, কালী চরিত্রটি সিঁদুরে রাঙানো তালপাতার জিভ লাগিয়ে নাচে বলে এর নাম কালিকাপাতাড়ি। এই নামের চলতি উচ্চারণ হয়েছে ‘কেলকেপাতাড়ি’। লক্ষ্য করা গেছে এরকম পাতার জিভ লাগিয়ে কালী সেজে যে সব সঙ চৈত্র মাসে ভিক্ষা করে বেড়ায় বা অল্পবিস্তর নাচ দেখায় তাদের কিন্তু কালিকাপাতাড়ি আখ্যা দেওয়া হয় না। কালীর সঙ বা কালীনাচ হচ্ছে, এরকম বলা হয়। কালিকাপাতাড়ি বা কেলকেপাতাড়ি নাচটি কেবল চৈত্রসংক্রান্তির ভোরে অর্থাৎ নীলরাত্রির শেষে অনুষ্ঠিত হয়। এটা চৈত্রসংক্রান্তির ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবেই বিবেচিত হয়। এই রচনায় পরবর্তী ক্ষেত্রে উল্লেখের সময় আমি কালিকাপাতাড়ি না বলে কেলকেপাতাড়ি শব্দটিই ব্যবহার করব।
যে সব গ্রামে উপযুক্ত শিল্পীরা বিশেষ উৎসাহ নিয়ে অনুষ্ঠানটি তৈরি করে পরিবেশন করেন, সেখানেই এটা হয়। সর্বত্র হয় না। তবে একবার শুরু হলে সেখানে সেটা প্রথায় পর্যবসিত হয়, এবং প্রতি বৎসরই অনুষ্ঠিত হতে থাকে। এক শিল্পীর অক্ষমতাব কারণে তার উত্তরাধিকারীও এসে যায়। আবার উপযুক্ত উত্তরাধিকারীর অভাবে কোনও গ্রামে এই নাচের প্রথা লুপ্ত হয়ে গেছে, এমনও দেখা যায়। এই নাচের প্রচলন হাওড়া জেলার দক্ষিণ অংশেই বেশি।
প্রসঙ্গত এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, গত পঁচিশ বছর যাবৎ শ্যামপুর থানার রতনপুর গ্রামের কেলকেপাতাড়ির দলটি জেলা এবং জেলার বাইরের বিভিন্ন অংশে নাচটি পরিবেশন করছে। ফলে বর্তমান দর্শককুলের মধ্যে কেলকেপাতাড়ি হিসেবে এই দলটির পরিবেশিত নৃত্য ধারাটিই পরিচিতি পাচ্ছে। কিন্তু রতনপুরের এই দলের নাচ বহু অংশে কেলকেপাতাড়ি নাচের ঐতিহ্য ও ভাবের অনুসরণ করে না। প্রত্যক্ষ কারণও আছে। এই দলের প্রধান কয়েকজন শিল্পী যাত্রাপালায় নিয়মিত অভিনয় করেন এবং ফ্রুট ইত্যাদি বাজান। ফলে এদের দলের নাচে অবধারিতভাবে আধুনিক যাত্রার ছাপ পড়েছে। তার সঙ্গে সর্বশেষ চাপ এসেছে টিভি সূত্রে ছৌ-নৃত্যের প্রভাব থেকে। এসব কারণে কেলকেপাতাড়ির প্রকৃত চরিত্রটি হারিয়ে গেছে। নীলরাত্রির ভোরে মশালের আলোয় কেলকেপাতাড়ি নাচের মূল আমেজটি বা তার ভাষণ ও ভয়ঙ্কর রসটি নষ্ট করে দিয়েছে আধুনিক ফ্লুরোসেন্ট টিউবের আলো। তার উপরে রতনপুরের এই দলটি বর্তমানে বড় বড় ফ্লাড লাইটে লাল নীল হলদে প্রভৃতি রঙিন কাগজ লাগিয়ে চেঞ্জিং করে পুরোপুরি একটি নির্বাক যাত্রাপালা বানিয়ে ফেলেছেন। সর্বশেষ ১৪০৫ এর নীলরাত্রিতে গিয়ে দেখে এসেছি যে, এঁরা আলোক সজ্জাতে সুবিধার জন্য অঙ্গন মঞ্চ ছেডে আটচালার চৌকো ছাদের নিচে উঠে যাচ্ছেন। যুগরুচির চাপে বা হবার তাই হচ্ছে। এসব কারণেই কেলকেপাতাড়ির প্রকৃত চরিত্রটি এখানে লিপিবদ্ধ করার বিশেষ প্রয়োজনও দেখা দিয়েছে।
প্রায় সমধর্মী নাচের উল্লেখ পাওয়া যায় উত্তর বঙ্গের ‘মশান’ নাচ-এ। সে নাচও অনুষ্ঠিত হয় ব্রাহ্ম মুহূর্তে বা প্রত্যুষে। ড. প্রদ্যোত ঘোষ মশান নাচের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘সে নৃত্য ভয়ঙ্কর। আলুলায়িত কেশ, বিরাট টিপ, সালঙ্কারা বিকট বদনা বিচিত্র বেশে নারী রূপে সজ্জিতা বিচিত্র অঙ্গভঙ্গীর নৃত্য। ধূপ-ধূনায় আচ্ছন্ন সমগ্র পরিবেশ ভয়াল হয়ে ওঠে।’ এই আলোচনার প্রথমেই উল্লেখ করেছি যে, এই নাচের সঙ্গে ছৌ-নাচের কিছুটা মিল আছে। বস্তুতঃ তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, ছৌনাচও আদিতে মুখোশ বিহীন এরকমই কালি-ঝুলি মেখে অঙ্গভঙ্গী-সর্বস্ব নাচ ছিল। প্রকৃতপক্ষে শুধু কেলকেপাতাড়ি, মশান বা ছৌ-নাচই নয় ভারতবর্ষ বা সমগ্র পৃথিবীতেই কৃষিভিত্তিক সমাজে এধরনের নাট্যগুণ সম্পন্ন নাচ প্রায় সর্বত্রই দেখা গেছে। যুগে যুগে বিভিন্ন প্রকারে এর রূপান্তর ঘটেছে। এধরনের অনুষ্ঠানগুলিকে মূর্তিপূজারই একটা ভিন্ন ধরন অর্থাৎ যাদুক্রিয়া হিসাবে গণ্য করা যায়। খড়-মাটির প্রতিমার পরিবর্তে যে চলন্ত প্রতিমা বা মূর্তি আমাদের সম্মুখে এবং আমরা যা চাই তাই আমাদের সামনে অভিনীত হচ্ছে এবং আমরা এটা অনুষ্ঠান করছি। অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দেবতার কাছে আমাদের বার্তা বা প্রার্থনা পৌঁছে দিচ্ছি। এটাই আদিম মানব সমাজের প্রক্রিয়া ছিল। কালে কালে অঞ্চলবিশেষে স্থানীয় মানুষের রুচিভেদে, রসবোধের তারতম্যে এই নৃত্যক্রিয়াগুলি শিল্পকলারসে মণ্ডিত হয়ে স্বাতন্ত্র্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এবং কৃষিভিত্তিক সমাজে যুগরুচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেগুলি স্বাভাবিক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান হিসেবেও গৃহীত হয়েছে।
আবার আধুনিক বিজ্ঞানাশ্রিত সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এদেশের প্রাচীন কৃষিভিত্তিক সমাজের সহজ সরল বিনোদনের উপাদানগুলিও স্বাভাবিক কারণেই লোপ পেতে শুরু করেছে। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ করে যে শিল্পগুলি গড়ে উঠেছিল সেগুলো আদিম, সেকেলে, গেঁয়ো-অশিল্পিত মানুষের কাজ, এরকম ধারণা প্রসার পাওয়ায় গ্রামের মানুষেরা সেসব বিষয় অনুষ্ঠান করতে আজ লজ্জা পাচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি তারা জুয়া খেলার আসর বসাতে লজ্জা পায় না। মদ, তাড়ি খেয়ে মাতলামি করতে লজ্জা পায় না। চাঁদা তুলে বারোয়ারী মণ্ডপে বসে ভিডিওতে বোম্বাই ফিল্মের অর্ধনগ্ন নায়িকার নাচ দেখতে লজ্জা পায় না। এটা যে আজকের শিক্ষা-দর্শনের ত্রুটি সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাই বহু গ্রামে দেখা পঁচিশ তিরিশ বছর আগেও হাজার হাজার মানুষের সামনে সঙের গান (মাড়োভাটা) বা কেলকেপাতাভি নাচ করে গ্রামের মানুষ সাধারণের চোখে বিশিষ্ট হয়ে উঠতে পারত, উৎসাহিত হত। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছেও বিনোদন তথা সাংস্কৃতিক উপাদানগুলির রঙ-রস বদলে গেছে। এখন টেপরেকর্ডার, সিনেমা, রেডিও, টিভি, ভিডিও ইত্যাদি হয়েছে সত্যিকার আমোদপ্রমোদের উপাদান। এমন কি যে যাত্রাপালার বিজ্ঞাপন রেডিওতে বাজে না, সে যাত্রাপালাও জাতে উঠতে পারে না। গ্রামের লোক নাক সিঁটকায়, “কই, ইটা ত এডুয়াতে শুনি নাই, ইটা ভাল হবে কি?” আগে গ্রামের মানুষরাই চিৎপুরের প্রকাশনী থেকে যাত্রাপালার বই কিনে নিয়ে গিয়ে বৎসরান্তে দু-তিন দিনের যাত্রার আসর বসাত। গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা খাওয়াদাওয়ার পর খেজুরপাতার চাটা বগলে ও হাতে হ্যারিকেন নিয়ে এসে বসত আটচালার একপাশে। এখন তেমন করে যাত্রার আসর বসায় এমন গ্রামের সংখ্যা হাতে গোনা যায়। শিবের গাজন উৎসবও সেই পর্যায়ে নেমে এসেছে। একদিকে হুগলীর তারকেশ্বর মন্দিরে জল নিয়ে যাওয়ার ঢল যেমন বেড়েছে, অন্যদিকে গ্রামের শিব মন্দির প্রাঙ্গণে জমায়েত কমেছে। অনেক গ্রামেই ব্যাপারটা ‘নমনম’ করে সারছে।
গাজনের মধ্য দিয়ে এক গ্রামের সঙ্গে অন্য গ্রামের সম্মিলনের প্রথা বহু প্রাচীন। বাঁশের মাথায় পালকের “মুকুট লাগানো দণ্ডটি নিয়ে ব্রত পালনকারী সন্ন্যাসীদের দুপুর রোদে এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রামে ঘুরতে দেখেছি। চৈত্রশেষের প্রখর রৌদ্র থেকে মাথার তালু বাঁচাতে গামছা ভিজিয়ে মাথায় রাখতে হলেও বিশ্রাম নেই। ছাড় নেই। প্রথা আছে অমুক-অমুক গ্রামে গাজন নিয়ে ‘মেল লাগা’-তে যেতেই হবে। গাজন নিয়ে তাঁরা যে গ্রামে পৌছাতেন সেখানকার গাজনের সঙ্গে নিজেদের গাজনটির গায়ে গা লাগিয়ে আলিঙ্গনের সঙ্গে সঙ্গে ‘বাবা তারকেশ্বরের চরণে সেবা লাগি- মহাদেব!’ বলে সমবেত ধ্বনি দেওয়া এবং সঙ্গে সঙ্গে ঢাকঢোল কাঁসরের বাজনা গ্রামের সাধারণ মানুষকে সচকিত করত। অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কৌতুহল ছিল উচ্চতায় কাদের গাজন হারে, আর কাদেরটা জেতে তাই দেখা। সবাই চাইত নিজেদের গ্রামের গাজনটা যেন জেতোর কামোরটাও জেহোর-জিত নিয়ে মাথা ঘামান না। তারা পরস্পরের গাজনদণ্ডের গায়ে খুব সামান্য দামের শোলার ফুল-মালা বেঁধে দিয়ে, এবং একে অপরকে আলিঙ্গন করে সম্প্রীতির ভাব প্রকাশ করত। এঁদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াত ‘মাড়ো ভাটার’ দল। একজন উৎসাহী ছেলে বুকে ন্যাকড়ার বল বেঁধে, তার উপর ব্লাউজ এবং শায়াশাড়ী ওড়না ইত্যাদি পরে মেয়ে সাজে। তার সঙ্গে অন্য ছেলেরাও নানারকম কিস্তৃত চরিত্রের নকল করে সঙ সাজে, এবং দল বেধে সন্ন্যাসীদের সঙ্গে সঙ্গে ঘুবে নাচ-গান করে। এই নাচ-গান চলার সময় সন্ন্যাসীরাও একটু বিশ্রাম করার সুযোগ পান। এই সব সাজা এবং নাচা-কোদা করার পরিবেশের প্রভাব এত তীব্র হয় যে, অংশগ্রহণে চাষা-চামার কি ধনী-গরীব পার্থক্য সবসময় বজায় থাকে না। অনেক গবেষক এই গাজন উৎসবকে সমাজের নিম্নবর্গীয় মানুষের আচরণ বলে বর্ণনা করলেও দেখা গেছে সর্বত্র তা নয়। কৃষিভিত্তিক সমাজে বিভিন্ন পেশা ও জাতিবর্গের মানুষ এতই কাছাকাছি অবস্থান করেন যে খুব ব্যতিক্রম ছাড়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ প্রায় একাকার বলা যায়।
কিন্তু আজ সেই চরিত্র বদলে গেছে। মাড়োভাটা বা সঙ সাজার ছেলে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক গ্রামেই গিয়ে শুনছি, ‘না না, উসব অ্যাখন আর ছানাপ্যানারা কত্তে চায়নি। ঐ কুনোরকমে বাবার মাথায় জল ঢেলে সংকাস্তি পেলে দেওয়া হয়।’ আসল কথা হল রুচি বদলেছে। এডুকেশন বেড়েছে। প্রকৃত শিক্ষার প্রসার ঘটেনি। এই জীবিকা বা চাকরিমুখী শিক্ষা কৃষ্টি কালচার আত্মসংস্কৃতির কিছুই দেয় না। পল্লীর সরল সহজ সাংস্কৃতিক উপকরণগুলিকে গ্রাম্য ব্যাপার হিসেবে দেখতে শিখেছে। মজা এখানেই। গ্রামের লোকও গ্রামের সংস্কৃতিকে অশিষ্ট বা গ্রাম্য এই আখ্যা দিয়ে গ্রাম থেকে দূর করে দিতে চাইছে। কারণ এখন গ্রামে টিভি, রেডিও, ভিডিও এসে গেছে। এসবে এখন অনেক মজা।- এই পটভূমিতে ‘কেলকেপাতাড়ি’ নাচের ব্যাপক অনুষ্ঠান অবশ্যই আশা করা যায় না। তাই বারে বারেই প্রবীণদের মুখে শুনতে হয়, ‘না মশায়, উসব এখন আর ইদিগে হয় না। শুনেছি অমুক জায়গায় হয়।’ অথবা কেউ বলছেন ‘হা আগে তো আমাদের গেরামে অমুক খুব ভাল কেলকেপাতাড়ি লাচত। এ্যাখন তো সে বড়ো হয়ে গেছে, আর পারে না।’ ইত্যাদি। এসব থেকে বোঝা যায় বর্তমান প্রজন্ম যেকোনও কারণেই হোক আমাদের সংস্কৃতির উত্তরাধিকার হারিয়ে ফেলছে। তাই এই মুহূর্তে রতনপুর চাঁপাবাড় কিংবা কালীনগরের মত কিছু জায়গায় বেলকেপাতাড়ি ও সঙের গানের অনুষ্ঠান দেখলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের কৌতূহল
জাগে এবং আধুনিক বঙ্গসংস্কৃতির পটভূমিতে এর মূল্যায়ণের প্রশ্ন আসে। সে প্রসঙ্গ এখানে বিস্তারিত করা উচিত হবে না। আমরা দেখতে চাই হাওড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কারা সৃষ্টি করল এই নির্বাক নৃত্যনাট্যের অনবদ্য শৈলী? বলা বাহুল্য এ প্রশ্নের উত্তর এক কথায় হয় না। তবে এটা অনুমান করতে বাধা নেই যে, পৃথিবীর নাট্যকলা সৃষ্টির যে আদিম সূত্র আছে সেটাই জড়িয়ে আছে কেলকেপাতাড়ির ছাগনাট্যের তত্ত্বই যেন কেলকেপাতাড়ির সৃষ্টিরহস্য উন্মোচন করে দেয়। অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গেছে কাহিনী, রস, আর ভাব। কাহিনী হয়ত পরে যুক্ত হয়েছে। পুরাণ যা বলেছে, তাকেই অবলম্বন করে প্রতিভাবান শিল্পী নানান ইঙ্গিত ও অঙ্গভঙ্গি সহকারে তা ব্যাখ্যা বা চিত্রায়িত করতে সচেষ্ট হয়েছেন। সাধারণ মানুষও অনেক সময়েই বিশেষ ভাব ও রস সৃষ্টি করতে ইশারায় কথা বলতে পছন্দ করেন। এই প্রবণতাটাই এখানে কাজ করেছে। বহুপূর্বে, কতটা সময় তা বলা মুশকিল, তবে যখন অবশ্যই কথ্যভাষা একটা চিত্রনাট্যকে প্রকাশ করার মত উপযুক্ত হয়ে তৈরি হয়নি, তখন মানুষকে সেই নাটকটা চিত্রায়িত করার জন্য ইশারায় অভিনয়ের আশ্রয় নিতে হয়েছিল। সেদিন ইশারা শুধু যে বক্তব্যের ভাষা দিয়েছিল তাই নয় রসও দিয়েছিল। ইশারা অভিনয়ের সেই গুণবত্তা আবিষ্কার ও তার মান-মূল্য আজও অক্ষুন্ন আছে। এটা যেন ভাবপ্রকাশের বিকল্পহীন এক প্রয়োগ কৌশল, যা নাট্যরসে মণ্ডিত হয়ে নাট্য কলায় রূপ নিয়েছে।
ছবি সায়ন দে’র সৌজন্যে
[তিনটি পর্বে প্রকাশিত হবে হাওড়ার লুপ্তপ্রায় লোকনাট্য নিয়ে তপন করের ‘কালিকাপাতাড়ি’। আগামীকাল ও পরশু পরবর্তী দুটি পর্ব প্রকাশিত হবে।]